শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:১০ রাত
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এশিয়ায় খেলাপি ঋণে শীর্ষে বাংলাদেশ: এডিবি রিপোর্টে দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থার চিত্র

বাংলাদেশ এখন এশিয়ার সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণের দেশ। ২০২৪ সালে দেশের মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গত মাসে প্রকাশিত এডিবির 'ননপারফর্মিং লোনস ওয়াচ ইন এশিয়া ২০২৫' প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। এটা আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এশিয়ার 'সবচেয়ে দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থার' দেশ।

এই অঞ্চলে এক বছরে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে ১১ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট, যা অস্বাভাবিক। অন্যদিকে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা গত বছর বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে খেলাপি অনুপাত কমাতে পেরেছে। নেপালে সামান্য বেড়েছে, ০.৯ শতাংশ।

দক্ষিণ এশিয়ার বড় অর্থনীতির দেশ ভারত তাদের খেলাপি ঋণ ৩ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২ দশমকি ৫ শতাংশে আনতে পেরেছে, কারণ তারা বড় ধরনের ব্যাংক সংস্কার করেছে।

এডিবি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশ মিলিয়ে ২০২৩ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার, যা এশিয়ার মোট খেলাপি ঋণের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এই অঙ্ক আগের বছরের তুলনায় কমেছে।

কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো চিত্র, এখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২৩ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ১৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২৩ বেড়ে হয় ৯ শতাংশ।

এডিবি বলছে, এতে বোঝা যায় বাংলাদেশে ঋণ দেওয়ার নিয়মকানুন দুর্বল এবং খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যবস্থাও কার্যকর নয়।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বহু বছর ধরে চলা শিথিল নিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব ও আগের সরকারের দায় এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক আগে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করত না। রাজনৈতিক চাপের কারণে বড় ব্যবসায়ীদের ঋণ বারবার নতুনভাবে সাজানো হতো, যেন প্রকৃত খেলাপি চিত্র বোঝা না যায়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ডেইল স্টারকে বলেন, আগের সরকার ঋণের নিয়ম শিথিল করে রেখেছিল। বড় ব্যবসায়ীদের ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করে দেখানো হতো, যেন সব ঠিক আছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকৃত তথ্য প্রকাশ শুরু করেছে। নিয়ম যত কড়া হবে, খেলাপি ঋণের অঙ্ক তত বাড়বে।

তিনি ভারতের উদাহরণ টেনে বলেন, একসময় ভারতও খেলাপি ঋণে ডুবে ছিল। কিন্তু তারা কঠোর সংস্কার করে সমস্যা অনেক সামলেছে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ভারতের মতো বাংলাদেশকেও কঠোর নিয়ম প্রয়োগ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর কিছু পরিবর্তন এসেছে।

তার মতে, এমনকি নেপালও এখন বাংলাদেশের চেয়ে ভালোভাবে ঋণ ব্যবস্থাপনা করছে। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের কাঠামোও তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী।

তিনি বলেন, আগের সরকার নিয়মকানুন বদলে খেলাপি ঋণ কম দেখাত। আবার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা প্রচুর ঋণ নিয়েছিল, যাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বা দুর্নীতির মামলায় জড়িত।

তিনি বলেন, 'তাদের সব ঋণ এখনো খেলাপি হিসেবে ধরা হয়নি। যদি তারা টাকা ফেরত না দেয়, তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে।'

সেলিম রায়হান মনে করেন, শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিবর্তন নয়, বরং আইন শক্তিশালী করা, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো এবং সবচেয়ে বড় কথা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা দরকার। আগামী নির্বাচিত সরকারকেও এই সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে।

এডিবি বলছে, এশিয়ার খেলাপি ঋণের বাজারে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দা, বাণিজ্য দ্বন্দ্ব ও ভূরাজনৈতিক সংকট আবারও খেলাপি ঋণ বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যেসব দেশ বেশি ঋণনির্ভর বা বাইরের বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল তারা ঝুঁকিতে আছে।

এডিবির পরামর্শ হলো, কঠোর আইন, কার্যকর বাজারব্যবস্থা ও দ্রুত নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি বিচারব্যবস্থা আরও দক্ষ করতে হবে, বাজার স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে ও বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এশিয়ায় খেলাপি ঋণের সমস্যা কার্যকরভাবে সামলানো যাবে। উৎস: ডেইলি স্টার।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়