নিজস্ব প্রতিবেদক : জনবল সংকট একটি বড় বাঁধা, বর্তমানে ২০০৩ সালের কল্পিত জনবল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বিইআরসি সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিইআরসি মিলনায়তনে কূপ ড্রিলিং ও নিরাপত্তা নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় এ মন্তব্য করেন তিনি। ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের সদস্যদের জন্য ওই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ২০০৩ সালের পর পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। তখন ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধারণা ছিল না। এখন ক্যাপটিভ বিদ্যুতের লাইসেন্সের সংখ্যাই ৪ হাজারের উপরে। এ রকম অনেক ক্ষেত্রে বিইআরসির ভূমিকা রাখার কথা বলা হয়েছে আইনে। লোকবল সংকটের কারণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছিনা। ২০১৭ সালে জনবল কাঠামো আপডেট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, তারপর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। এখন আরও জনবল বাড়ানো দরকার।
আইনে বলা হয়েছে কোন প্রকল্প নিতে গিলে বিইআরসির অনুমোদন নিতে হবে। সেখানে লোকবল না থাকলে কিভাবে প্রকল্প যাচাই-বাছাই করবো। আমরা প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে দেখবো। এতে অনেক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রকল্প গ্রহণের পুর্বে বিইআরসির অনুমতি নিতে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলতে চাই। যাতে আরও ভালো সেবা নিশ্চিত করা যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কমিশন নীতিগতভাবে একমত। আমাদের চেষ্টা থাকবে অন্য খাতে যাতে ব্যয় না করা হয়।
উল্লেখ্য ২০০৯ সালে পেট্রোবাংলা অর্থ সংকটে অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা জানালে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের প্রসঙ্গ সামনে চলে আসে। পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো অর্থ সংকটের কারণে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। সে কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। পেট্রোবাংলা প্রস্তাব করেছিলো গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে সংগৃহীত অর্থ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে ব্যয় করা হবে।
তখন বুয়েট অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম প্রস্তাব দিয়েছিলেন গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করার। যার অর্থ দিয়ে অনুসন্ধান ও উন্নয়ন করা হবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আদেশে ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’ গঠনের নির্দেশ দেয় বিইআরসি। এ জন্য ভোক্তাদের উপর প্রতি ঘনমিটারে ৪৬ পয়সা অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করা হয়। যা ২০০৯ সালের আগস্ট থেকে কার্যকর করা হয়। পরে সেই তহবিলের টাকা নানা খাতে ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি এলএনজি আমদানির কাজে ব্যবহারের নজীর সৃষ্টি করেছে বিগত সরকার। এ নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ।
সিসমিক সার্ভের মাধ্যমে গ্যাসক্ষেত্রের লোকেশন চিহ্নিত করা, এরপর কূপ খনন, ডিএসটি এবং গ্যাসের মজুদ নির্ণয় প্রক্রিয়া এবং ঝূঁকির দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করে বিইআরসির সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান। যিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কোম্পানির শীর্ষ পদে থেকে কূপ খননের কাজ তদারকি করেছেন। বাংলাদেশের প্রচুর গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিষয়টিও তুলে ধরেন।
অন্যদিকে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তার দীর্ঘ উপস্থাপনা দেন বিইআরসির সদস্য ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া। জ্বালানি বিটের সাংবাদিকদের জন্য কর্মশালার আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানান ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোঃ শামীম জাহাঙ্গীর।
বিইআরসির সদস্য মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য ব্রিগে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ শাহিদ সারওয়ার, কমিশনের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম সরকার ও শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ।