শিরোনাম
◈ কোরিয়ায় 'লাভবাগ' আতঙ্ক: পোকার আক্রমণে নাজেহাল রাজধানী ◈ যা ঘটেছিল সেদিন, বর্ণনা দিলেন সেই এইচএসসি পরীক্ষার্থী ◈ পিএসসি সংস্কারের দাবিতে শাহবাগ ব্লকেড, পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি ◈ বাংলাদেশে ধর্ষণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, প্রশ্নের মুখে রাষ্ট্রের ভূমিকা ◈ সরকারি চাকরিতে আসছে বড় পরিবর্তন ◈ বাংলা‌দে‌শে রাজ‌নৈ‌তিক অ‌স্থিরতার ধু‌য়ো তু‌লে আগ‌স্টে সফ‌রে আস‌ছে না ভারতীয় ক্রিকেট দল ◈ একযোগে ১৫ নেতাকে অব্যাহতি দিল ছাত্রদল ◈ পাকিস্তান চীনের ‘জীবন্ত পরীক্ষাগার’, ৮১% সামরিক সরঞ্জাম চীনা: দাবি ভারতের জেনারেল রাহুল সিংয়ের ◈ ক্রোম ব্রাউজারে ভয়ংকর নিরাপত্তাত্রুটির সন্ধান, নিরাপদ থাকতে যা করতে হবে ◈ পাটগ্রামে থানায় হামলার প্রসঙ্গ টেনে জামায়াত আমিরের মন্তব্য: ‘এই পরিস্থিতিতে কী নির্বাচন হবে?’

প্রকাশিত : ০৪ জুলাই, ২০২৫, ০৫:৫৩ বিকাল
আপডেট : ০৫ জুলাই, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্থিতিশীল বাজারে সবজি রপ্তানিতে রেকর্ড: এক বছরে প্রবৃদ্ধি ৩১৩%, শীর্ষে আলু ও বাঁধাকপি

টানা কয়েক বছরের অস্থিরতা ও মূল্যবৃদ্ধির পর দেশে সবজির বাজার স্থিতিশীল থাকায় সদ্যসমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সবজি রপ্তানি তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সমুদ্রপথে সবজি রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৭৬৬ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের তুলনায় ৩১৩ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি।

রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে আলুর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি,মোট ৪০ হাজার ৫৪৩ টন। এরপর রয়েছে ১৬ হাজার ৯৫৯ টন তাজা সবজি এবং ১ হাজার ২৬৪ টন হিমায়িত সবজি।

২০২৩–২৪ অর্থবছরে সমুদ্রপথে সবজি রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১৪ হাজার ২০২ টন। এর মধ্যে আলু ছিল ১১ হাজার ১২৭ টন, তাজা সবজি ১ হাজার ৬৬৯ টন এবং হিমায়িত সবজি ১ হাজার ৪০৬ টন।

তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২–২৩ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৯২৩ টন। এ সময় ২৯ হাজার ৫৬০ টন আলু, ৩ হাজার ১৭৬ টন তাজা সবজি এবং ১ হাজার ১৮৭ টন হিমায়িত সবজি রপ্তানি করা হয়।

২০২১–২২ অর্থবছরে সমুদ্রপথে রপ্তানি হয়েছিল ৬০ হাজার ৬৩৪ টন সবজি। এর মধ্যে ৫৩ হাজার ২৪ টন ছিল আলু, ৫ হাজার ৫৮২ টন তাজা সবজি এবং ২ হাজার ২৮ টন হিমায়িত সবজি।

গত কয়েক বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাড়তি পরিবহন খরচ ও অভ্যন্তরীণ বাজারের অস্থিরতার কারণে সবজি রপ্তানি কমে যায়। একসময় যেখানে আলু রপ্তানি ৫০ হাজার টনের আশপাশে থাকত, তা নেমে আসে কয়েক হাজার টনে। এতে রপ্তানিকারকেরা নিরুৎসাহিত হন।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজার পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি জোরদার করা হয়, যার ফলে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল হয়। এ অবস্থায় রপ্তানিকারকেরা পুনরায় রপ্তানিতে সক্রিয় হন।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সবজির মধ্যে আলুর রপ্তানি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। গত কয়েক বছর দেশের বাজারে আলুর দাম বেশি থাকায় রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার বাজার স্থিতিশীল থাকায় শুধু সমুদ্রপথেই নয়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়েও ২০ হাজার টন আলু নেপালে রপ্তানি করা হয়েছে, যেখানে আগে এ বাজারটি ভারতের দখলে ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'এবার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে পরিবহন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি বাঁধাকপি ও কচুর মতো নতুন কিছু পণ্যের পরীক্ষামূলক রপ্তানি সফল হয়েছে। সাধারণত তাজা সবজি বিমানে রপ্তানি করা হলেও এবার এসি কনটেইনার ব্যবহার করে সমুদ্রপথে সেগুলো পাঠানো সম্ভব হয়েছে।'

চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, রপ্তানিকৃত তাজা সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ছিল ১৫,৭০৬.২৭৮ মেট্রিক টন, মিষ্টি কুমড়া ৭০০.৫০০ টন, মরিচ ২৭৮.৯১৫ টন, টমেটো ১৬৭.৬৯৬ টন, ফুলকপি ২৩.৫২০ টন, কচু ৫৬.০১০ টন এবং অন্যান্য সবজি ২৫.৯৬ টন।

বাংলাদেশ থেকে মূলত মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব ও অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশে সবজি রপ্তানি হয়ে থাকে। এসব দেশের প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দক্ষিণ এশীয় রেস্তোরাঁগুলো এসব সবজির প্রধান ক্রেতা।

রপ্তানিকৃত সবজির তালিকায় আলু শীর্ষে, এরপর রয়েছে বাঁধাকপি। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, ফুলকপি, টমেটো, কচু, শিম, কাঁকরোল, পটোল ও মুখীকচুসহ নানা ধরনের সবজি রপ্তানি করা হয়। অনেক সময় তাজা সবজি ফ্রোজেন করে সাধারণ কনটেইনারে করে ইউরোপ ও আফ্রিকাতেও পাঠানো হয়।

চট্টগ্রাম, পার্বত্য এলাকা, যশোর, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, মেহেরপুর ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসব সবজি সংগ্রহ করা হয়।

চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স গ্রুপের সভাপতি মাহবুব রানা বলেন, 'গত কয়েক বছর দেশে আলুর দাম অনেক বেশি ছিল, সবজির বাজারও ছিল অস্থির। এসব কারণে রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়েছিল। এখন সেই জটিলতা কেটে যাওয়ায় রপ্তানি বেড়েছে।'

তবে তিনি জানান, এখনো নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তিনি বলেন, 'বিমানে পর্যাপ্ত কার্গো স্পেস না থাকায় সবজি রপ্তানির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকায় এক কেজি সবজি পাঠাতে পরিবহন ব্যয় পড়ে ৬৫০–৭০০ টাকা, যেখানে ভারত তা ৩০০ টাকার কমেই করতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকারি ভর্তুকির পরিমাণও ক্রমেই কমছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে তা পুরোপুরি তুলে নেওয়ার কথা রয়েছে। সরকার যদি এ খাতকে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে সবজি রপ্তানির পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব।' সূত্র: টিবিএস নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়