মনজুর এ আজিজ : গ্যাস বিক্রি বাবদ চলতি বছর ৩৮ হাজার ৯৭০ কোটি টাকার বিপরীতে এলএনজি আমদানি করতে খরচ হবে ৫৬ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে ঘাটতি হবে ১৭ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। বাজেটে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিলেও চলতি বছর এলএনজি আমদানিতে ১১ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়েছে সরকার। জ্বালানি বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এলএনজি আমদানির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় ভর্তুকি ও ঘাটতি দুটোই বাড়বে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, প্রতি ঘনমিটার এলএনজি মিশ্রিত গ্যাস দেশে বিক্রি হচ্ছে ২২ দশমিক ৬৪ টাকা। এর বিপরীতে এলএনজি আমদানির সঙ্গে দেশের গ্যাসের মিশ্রণে গড় আমদানি ব্যয় হচ্ছে ২৯ দশমিক ৭২ টাকা। এতে প্রতি ঘনমিটারে ঘাটতি থাকছে ৭ দশমিক ৮ টাকা। দেশে প্রতিদিন ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ১৯০০ থেকে ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় উৎস থেকে, আর বাকি গ্যাস সরবরাহ করা হয় আমদানি করা এলএনজি থেকে। তবে স্পট মার্কেট থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দামে এলএনজি আমদানিতে খরচের পরিমাণ বেড়ে যায়। ডলার সংকট ও দাম বৃদ্ধিতে সাবেক আওয়ামী সরকার এলএনজি সঠিকভাবে আমদানি করেনি। আর এর বিপরীতে বারবার বাড়িয়েছে গ্যাস বিদ্যুতের দাম।
সূত্রটি আরও বলছে, বাংলাদেশ দুটি উৎস থেকে এলএনজি আমদানি করে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানিতে ব্যয় পড়ে প্রতি এমএমবিটিইউ (এলএনজি পরিমাপের একক) ১০ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার। অপরদিকে স্পট মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে যে এলএনজি কেনা হয়, তার দাম পড়ছে ১৪ মার্কিন ডলার। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছর ৯৮ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। তবে আগামী দুই মাসের বাড়তি চাহিদা মেটাতে আরও অতিরিক্ত দুই কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে বলে জানা গেছে। এলএনজি আমদানিতে এবার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি বছর গ্যাস বিক্রি বাবদ পাওয়া যাবে ৩৮ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি পড়ছে ১৭ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। এবারের বাজেট থেকে জ্বালানি খাতে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিলেও চলতি বছর এলএনজি আমদানিতেই শুধু ঘাটতি পড়ছে ১১ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা।
জানা যায়, বাংলাদেশ কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি আমদানি করে। এর বাইরে সিঙ্গাপুরের স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হয়। প্রতিদিন ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি হলে এর প্রায় অর্ধেক গ্যাস দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আনা হয়। বাকিটা স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করে সরকার।
জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুতের বাইরে শিল্পে এবং সারে গ্যাসের বাড়তি চাহিদা তৈরি হচ্ছে। এজন্য সরকার এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করছি সব ঠিক-ঠাক থাকলে দেশে গ্যাসের সংকট অনেকাংশে কমে আসবে।
এদিকে বুধবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভা শেষে জ্বালানি উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান ভর্তুকির বিষয়ে কথা বলেন। বাড়তি কার্গো আমদানি করলে ভর্তুকি বাড়বে কিনা এবং গ্যাসের দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বাড়তি এলএনজি আমদানির ফলে ১১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। তবে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হলে সেটার দাম আরও বেশি হবে। এজন্য সরকার একটা ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। সরকার বেশি দামে গ্যাস এনে কম দামে সরবরাহ করছে। তবু জনস্বার্থ ও শিল্পের স্বার্থে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সরকার আপাতত বাড়াবে না বলে জানান তিনি।