শিরোনাম
◈ সাভারে মেয়ের হাতে বাবা খুনের আসল ঘটনা নিয়ে যা জানা গেলো ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে আনন্দ উল্লাস! (ভিডিও) ◈ পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশকে জামায়াতের কাছে লিজ দিন: ডা. তাহের ◈ জনগণ পলাতক অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না: তারেক রহমান (ভিডিও) ◈ লঞ্চে দুই তরুণীকে পেটানো যুবকের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ, আসলে কী হয়েছিলো? যা জানাগেল (ভিডিও) ◈ তামিম ইকবালকে নিয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরু (ভিডিও) ◈ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে এতদিন পরে রাস্তায় কেন? ◈ ভারতীয় মিডিয়া যা তা নিউজ করে, ন্যূনতম স্ট্যান্ডার্ড নেই ওদের: শফিকুল আলম (ভিডিও) ◈ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৫:৫৬ বিকাল
আপডেট : ২৯ মার্চ, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

সব ধরনের শিল্পেই বাড়ছে গ্যাসের দাম!

মনজুর এ আজিজ : শুধু নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম ১৫২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাবে ব্যবসায়ী মহলের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নতুন ভাবনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এখন সব শিল্পেই দাম বাড়ানোর বিষয়টি শীর্ষ কর্তাদের টেবিলে আলোচিত হচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। 

নতুন ও বিদ্যমান শিল্পেও ঘনমিটার প্রতি ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ৪২ টাকা করার বিষয়টি সামনে এসেছে। বর্তমানে যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা দর রয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যমান শিল্পের দাম অপরিবর্তিত রেখে নতুন শিল্প এবং বিদ্যমান শিল্পের লোড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দাম বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার আবেদন করেছে পেট্রোবাংলা ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। সেই প্রস্তাবের ওপর ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।

নতুন ভাবনা কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি সূত্রটি। ধারণা করা হচ্ছে শুনানির আগে সম্পূরক প্রস্তাব আসতে পারে, অথবা শুনানিতেই বিষয়টি মৌখিকভাব উত্থাপিত হতে পারে। এমনও হতে পারে বিইআরসিকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হতে পারে।

সব শিল্পে দাম বাড়ানোর শঙ্কা যারা দেখেন তারা মনে করছেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ যে দরের ফর্মুলা দিয়েছে তা দিয়ে শেষ রক্ষা হবে না। কারণ পেট্রোবাংলা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলেছে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫.৭০ টাকা। ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৫.৭২ টাকা। ফলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমাতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০১ কার্গো এলএনজি আমদানি করলে চলতি অর্থবছরে পেট্রোবাংলার ঘাটতি হবে প্রায় ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আর ১১৫ কার্গো আমদানি করলে ঘাটতি ২২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা।

নতুন শিল্পের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হলে সেখান থেকে বাড়তি টাকা আসতে শুরু করবে দুই বছর পর। আর বর্ধিত লোড যারা ব্যবহার করছেন তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা রাজস্ব বাড়বে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী (নভেম্বর ২০২৩ হতে অক্টোবর ২০২৪) এক বছরে ২০৫ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করছেন। পেট্রোবাংলার প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ৪৫ টাকা হারে বাড়তি আয় দাঁড়াবে ৯২২ কোটি টাকা।

পেট্রোবাংলার প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের (ইতোমধ্যে অনুমোদিত) অর্ধেক বিল বিদ্যমান দরে, অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা হার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এ রকম প্রতিশ্রুত লোড শিল্পে ৩১০ মিলিয়ন ঘনমিটার ও ক্যাপটিভে ২৯০ মিলিয়ন ঘনমিটার। মোট ৬০০ মিলিয়নের মধ্যে ৩০০ মিলিয়ন বিল বর্ধিত দর হলে আয় করবে ১৩৫০ কোটি টাকা। এতে উভয় অংশ থেকে ২৩০০ কোটি টাকার মতো বাড়তি আয় করবে পেট্রোবাংলা। যেখানে তাদের ঘাটতি ১৬ হাজার থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা। সে কারণে সব শিল্পের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা জোরালো দেখছেন অনেকেই।

গত ৬ জানুয়ারি বিদ্যমান গ্রাহকদের দর অপরিবর্তিত রেখে নতুন শিল্প কারখানার বয়লার ও শিল্প কারখানার জেনারেটরে (ক্যাপটিভ) সরবরাহ গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। বিদ্যমান গ্রাহকদের অপরিবর্তিত রেখে প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের (ইতোমধ্যে অনুমোদিত) অর্ধেক বিল বিদ্যমান দরে, অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা হার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে বিব্রতবোধ করছেন বিতরণ কোম্পানিগুলো। তারা কেউই শিল্প ও ক্যাপটিভে ১৫২ শতাংশ দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা দেখছেন না।

একাধিক বিতরণ কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, পেট্রোবাংলা আমাদের কাঁধে বন্দুক রেখে দাম বাড়াতে চাইছে। গণশুনানিতে ভোক্তাদের মুখোমুখি হতে হবে আমাদেরকে। অথচ আমরা এই দাম বাড়ানোর সঙ্গে মোটেই একমত নই। আমরা যতটুকু জেনেছি মন্ত্রণালয়ের চাওয়া অনুযায়ী নতুন দর ফর্মুলা প্রস্তুত করা হয়েছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে হয়েছে। কোম্পানিগুলো পেট্রোবাংলার মতো করে হুবহু প্রস্তাব জমা দিয়েছে কমিশনে।

পেট্রোবাংলা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করার জন্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে বিইআরসি। গণশুনানির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব চুড়ান্ত করার বিধান রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১ টাকা দরে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি থেকে ১.২৫ টাকা দরে, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট গ্যাস কেনা হয়। এরপর বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও টাল্লোর কাছ থেকে কেনা গ্যাসের সংমিশ্রণে গড় দর দাঁড়ায় ৬.০৭ টাকা ঘনমিটার।

পেট্রোবাংলা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলেছে, গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। সরবরাহকৃত গ্যাসের মধ্যে দেশীয় গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৭৫ শতাংশের মতো, অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে করা হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে এবং এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ২০৩০-৩১ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৫ শতাংশে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, এই প্রস্তাব পাস হলে শিল্পায়ন থমকে যাবে। একটি অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে। নতুন করে বিনিয়োগ আসবে না। কেউ ৩০ টাকা দিয়ে গ্যাস কিনবে আবার কেউ ৭৫ টাকা দিবে, যারা বেশি দামে কিনবে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। 

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিইআরসিতে একটি প্রস্তাবই জমা দিয়েছি। সেই প্রস্তাবে নতুন শিল্প ও লোডবৃদ্ধির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন বিষয়টি তাদের এখতিয়ার। এছাড়া আর কোনো বিষয়ে আমার জানা নেই।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদও এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়