এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলে একসময় শুধু রপ্তানি নির্ভর বন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল মোংলা। এখন সেই বন্দর দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড রাজস্ব আয় প্রমাণ করছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে মোংলার ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব।
গত এক দশকে বন্দরের অবকাঠামো আধুনিকায়ন, নতুন জেটি ও ইয়ার্ড নির্মাণ, উন্নত যন্ত্রপাতি সংযোজন, সড়ক-নদী-রেল সংযোগ এবং ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালুর মাধ্যমে বন্দরের কার্যক্রমে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে বহুগুণ।
বন্দরের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার ৩৮৭ লাখ টাকা। বাস্তবে আয় হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৩৩ লাখ টাকা—লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৪৬ লাখ টাকা বা ২.৮৩% বেশি।
উপ-পরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির ফলে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে। সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী দিকনির্দেশনা রাজস্ব বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানান, শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ষ্টিভেডরসহ স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা, বিশেষ সুবিধা ও ব্যবসায়ীদের জন্য গৃহীত পদক্ষেপের কারণে আজকের এই সাফল্য এসেছে। বন্দরে বর্তমানে জাহাজ জট নেই এবং গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় রয়েছে চ্যানেলের গভীরতা বাড়ানো, বড় জাহাজ ভেড়ার ব্যবস্থা, বিশেষায়িত জেটি নির্মাণ এবং চীনের সঙ্গে চুক্তির আওতায় দুটি নতুন কন্টেইনার টার্মিনাল তৈরি। বর্তমানে দেশে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির প্রায় ৫৫% খালাস হয় মোংলা থেকে।
মোংলা বন্দরের অগ্রযাত্রা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, দক্ষিণবঙ্গের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। খুলনার এই বন্দর ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর থেকে দেশের অর্থনৈতিক ‘হাব’-এ পরিণত হওয়ার পথে।