মনিরুল ইসলাম, কক্সবাজার থেকে : কক্সবাজারে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক অংশীজন সংলাপের শেষ দিনে (মঙ্গলবার) বিদেশি কূটনীতিক, জাতিসংঘ সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং দেশের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন।
প্রতিনিধিরা শিবিরে রোহিঙ্গাদের জীবনযাপন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, খাদ্য সরবরাহসহ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। তারা বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফপি) খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং ইউএনএইচসিআরের স্যানিটারি ন্যাপকিন উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, অংশগ্রহণকারীদের সরেজমিনে শিবির দেখানো হয়েছে যাতে তারা বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে শিবিরে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এজন্য দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে আমরা অর্থায়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা শুধু বাংলাদেশের ওপর নয়, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ডব্লিউএফপি–এর প্রোগ্রাম পলিসি অফিসার শেখ রবিউল আলম জানান, বিদ্যমান তহবিল দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা চালানো সম্ভব হবে। কিন্তু নতুন অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি না থাকায় শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তার ভাষায়,
“নতুন অর্থায়ন না এলে খাদ্য সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ মানবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।”
রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও শিবির পরিদর্শনে অংশ নেন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি-সহ ১০টি দলের নেতারা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট কোনো একক সরকারের নয়, এটি জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়। তাদের মতে, সব দলের সক্রিয় সম্পৃক্ততা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী করবে।
বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের অসাধারণ ভূমিকার প্রশংসা করেন। তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারে আয়োজিত সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। আশা করা হচ্ছে, এ প্ল্যাটফর্ম থেকে সংকট সমাধানে নতুন দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।
এভাবেই কক্সবাজারে আয়োজিত তিন দিনের আন্তর্জাতিক অংশীজন সংলাপ সমাপ্ত হলো, যা কক্সবাজারকে বৈশ্বিক মানবিক কূটনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
