এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রতিদিনই বদলে যাচ্ছে পানগুছি নদীর ভাঙনে। দীর্ঘ ৫২ বছরেও প্রতিশ্রুত স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়নি। এ সময়ে বহু বসতবাড়ি, প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। একসময়কার সরু নদী এখন তিনগুণ প্রশস্ত হয়ে এক কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। নদীর তীরে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসতি আজ হুমকির মুখে।
স্বাধীনতার আগে থেকেই পোল্ডার নং ৩৫/২ প্রকল্পের আওতায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। স্থানীয়রা বহুবার আন্দোলন, মানববন্ধন করলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
গাবতলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, “অনেক পরিবার নদীগর্ভে সব হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।” স্থানীয় জেলেপল্লীর বাসিন্দারাও জানান, বারবার ঘরবাড়ি ভাঙলেও নতুন করে গড়ে তুলতে হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-বন্যায় তারা সবসময় আতঙ্কে থাকেন।
অন্যদিকে কাঁঠালতলার আশ্রয়ন প্রকল্পের পরিবারগুলো চার মাস আগে ঘর পেলেও যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় চরম দুর্ভোগে আছেন।
গত ৫২ বছরে মোরেলগঞ্জ সদর থেকে খাদ্যগুদাম, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, টেলিফোন অফিস, স্কুল, ডাকবাংলো, ইউনিয়ন পরিষদ, পোস্ট অফিস, মসজিদ-মন্দিরসহ বহু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে অন্তত ৩০টি গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
২০১৭ সালে স্থানীয় এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেন বেড়িবাঁধের জন্য ডিও লেটার দেন। পরে পানিসম্পদ মন্ত্রীও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০২১ সালে অন্য এক পরিদর্শনে দ্রুত নদীশাসন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেওয়া হয়। সর্বশেষ এমপি বদিউজ্জামান সোহাগ ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে আসেন। স্থানীয়রা তখন স্লোগান দেন— “ত্রাণ চাই না, চাই টেকসই বেড়িবাঁধ।”
খাউলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার সাইদুর রহমান বলেন, “সন্ন্যাসী লঞ্চঘাট থেকে মোরেলগঞ্জ শহর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণ করলে এ ভোগান্তি দূর হবে।”
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের টিম সরেজমিন পরিদর্শন করেছে এবং প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ২৬ কোটি টাকার প্রকল্পও জমা আছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুত কাজ অনুমোদন হবে।