শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা অফিস: কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার মাস্টার মাইন্ড শাহ পরানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাতে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব এ কথা জানায়। প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব তাকে গ্রেফতার করে বলে জানা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, পূর্বশত্রুতার জেরেই এই জঘন্য ঘটনা ঘটানো হয়। দীর্ঘদিন ধরেই দুই ভাই শাহ পরান ও ফজর আলী মিলে ভুক্তভোগী নারীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল।
র্যাব আরও জানায়, দুই মাস আগে ফজর আলী ও তার ছোট ভাই শাহ পরানের বিরোধের জের ধরে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গ্রাম্য সালিশে জনসম্মুখে বড় ভাই ফজর আলী তার ছোট ভাই শাহ পরানকে চড়-থাপ্পড়ও মারে। বড় ভাইয়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে সুযোগের সন্ধানে থাকে শাহ পরান। সালিশের কিছু দিন পর ওই নারীর মা ফজর আলীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদের বিনিময়ে ঋণ নেয়। ঋণের টাকা আদায়ের জন্য মাঝেমধ্যেই ফজর আলী ওই বাসায় যেত। এটাকেই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুযোগ হিসেবে বেছে নেয় শাহ পরান।
র্যাব জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর নারীর বাবা-মা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মেলা দেখতে যান। এ সময় ফজর আলী সুদের টাকা আদায়ের অজুহাতে নারীর ঘরে প্রবেশ করে। এর কিক্ষুক্ষণ পরে ওত পেতে থাকা শাহ পরান ও আবুল কালাম, অনিক, আরিফ, সুমন, রমজান এবং অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জন ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে নারীকে শারীরিক নির্যাতন করে। এ সময় অশ্লীল ভিডিওচিত্র ধারণ করে তারা। পরে সেই ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার পর থেকে শাহ পরানসহ অভিযুক্ত সবাই আত্মগোপনে চলে যায়। র্যাব জানিয়েছে, বাকিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। র্যাবের ভাষ্য মতে, পরিকল্পনার মূল হোতা শাহ পরান তার বড় ভাই ফজর আলীর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধের জেরে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটি মব গঠন করে। এরপর ফজর আলী ও ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটায়। সেই মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ঘটনার পরিপেক্ষিতে গত ২৬ জুন রাতে ফজর আলী ৫০ হাজার টাকা সুদের লেনদেনের অজুহাতে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে। এরপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে শাহ পরান ও তার সঙ্গে থাকা আবুল কালাম, অনিক, আরিফ, সুমন ও রমজান ওই ঘরে হানা দেয়। তারা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ফজর আলীকে মারধর করে এবং নারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করে। পরে ধারন করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, শাহ পরান ভিডিও ধারণ এবং মব সৃষ্টির জন্য ইমো অ্যাপে মেসেজ দিয়ে অন্যদের ডেকে আনে বলেও জানিয়েছে র্যাব। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে ছিল অভিযুক্তরা। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহ পরানকে গ্রেফতার করা হয়।
লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শাহ পরান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায় স্বীকার করেছে। তাকে মুরাদনগর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৬ জুন রাতে মুরাদনগরের বাহেরচর গ্রামে ওই নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয় এবং সেই ভিডিও ২৯ জুন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একই দিন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ফজর আলীসহ এখন পর্যন্ত ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।