অগ্নিসংযোগে ধ্বংস থানার সংস্কারের পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও হট্টগোল
ফয়সাল চৌধুরী, কুষ্টিয়া : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া মডেল থানায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। এতে দু্ইতলা থানা ভবন পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। এমন অবস্থাতেই পোড়া ভবনে রঙ ও মেরামত করে কার্যক্রম শুরু করেছে জেলার মডেল থানা পুলিশ।
শনিবার (৩১ মে) বেলা ৪টায় কুষ্টিয়া মডেল থানার কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে থানা চত্বরে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করে জেলা পুলিশ। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক। সুধী সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি রেজাউল হক বলেন,পুলিশের চাকরি করে সকল মানুষকে সন্তুষ্ট করা খুবই কঠিন। আল্লাহ যদি কাউকে ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেন হয়তোবা তার দ্বারা সম্ভব। বাংলাদেশে বা পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে অনেকগুলো মানুষকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের কেউ অপরাধ করলে সেটা তার ব্যক্তিগত দায়, প্রতিষ্ঠানের দায় নয়। এখন পর্যন্ত আপনারা যে সেবাটা চান তা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা যারা কাজ করছি তাদের ভূল ভান্তি হতে পারে। একটু খেয়াল রাখবেন আমাদের ভুলটা ইনটেনশনালি নাকি কাজ করতে গিয়ে মানুষ হিসেবে যে ভুল করছি সেটা। মানুষ হিসেবে সাধারণ ভুল হলে সমাজ বা রাষ্ট্রের কোন ক্ষতি হয় না। আর যদি ইনটেনশনালি ভুল হয় তাহলে আমাদের টলারেন্স জিরো।
এরপর তিনি সুধী সমাবশে যোগদেন। সেখানে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার,কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক, নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি আলমাস মামুন, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সস্পাদক জুবায়েদ রিপন সহ অন্যান্যরা।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক কমিটির প্রতিনিধির বক্তব্যর বিরোধীতা করে সমাবেশস্থলে হট্টগোল শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আল আমিন কানাই, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, যুবদল নেতা শরীফসহ বেশ কয়েকজন তাদের দিকে তেড়ে যান। পরে পুলিশ ও উপস্থিত জনতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিএনপি নেতা আল আমিন কানাই বলেন, আন্দোলনে সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করেছি আমরা। ৫ আগস্টের পর পুলিশকে আমরা শেল্টার দিয়ে কাজে ফিরিয়েছি আর পুলিশের প্রোগামে আমাদের বলা হয় না। আবার বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেই দুইদিনকার ছেলেপেলে।
কামাল উদ্দিন বলেন, মঞ্চে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উঠিয়ে আমাদের সামনে বসিয়ে রাখা অপমানজনক। আবার এরা বিএনপি বিরোধীতা করে বক্তব্য দেই। পুলিশকে আমি সহযোগিতা করেছি। অথচ আমাদের বলা হয়নি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্যান্য থানার মতো কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আমাদের সহযোগিতায় থানার বেশ কিছু হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ ।
এদিকে এর প্রায় এক সপ্তাহ পর ১২ আগস্ট শহরের আমলাপাড়ায় অবস্থিত সদর ফাঁড়িতে অস্থায়ীভাবে থানার কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ। এরপর পোড়া ভবন সংস্কারের কাজও শুরু হয়।