নাজমুস সাকিব মুন, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সোনাহার মল্লিকাদহ ইউনিয়নের উমেষের ডাঙ্গায় খড়খড়িয়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ চলছে ধীরগতিতে। শুরু হয়েছে দেড় বছর আগে। কিন্তু এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি পিলার নির্মাণও। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। সামনে বর্ষায় এ কষ্ট আরও বাড়বে।
স্থানীয়রা জানান, উমেষের ডাঙ্গা হয়ে পার্শ্ববর্তী সোনাহার ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ড এবং দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কয়েকটি এলাকায় যাতায়াত করেন হাজারো মানুষ। বাজার, স্কুল, কলেজ, ইউনিয়ন পরিষদ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নদী পার হতে হয়। আগে এখানে বাঁশের সাঁকো ছিল। কাজ শুরুর সময় সেটিও অর্ধেক ভেঙে ফেলা হয়। অসময়ে ভারী বর্ষণে বিকল্প পথ না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। বর্ষায় কিভাবে নদী পারাপার হওয়া যাবে তা নিয়ে চিন্তিত স্থানীয়রা।
এলজিইডি জানায়, ২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর সেতুর কাজ শুরু হয়। বরাদ্দ হয় ৬ কোটি ৩০ লাখ ৪৭ হাজার ৪৮৪ টাকা। নির্ধারিত সময় ছিল ২০২৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু প্রায় তিন মাস সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো কাজের গতি বাড়েনি।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা প্রকৌশলী শাহরিয়ার ইসলাম শাকিলের দায়িত্বহীনতায় সুযোগ পেয়েছে ঠিকাদার। সময় মতো কাজ বুঝিয়ে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি তাতে ব্যর্থ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্ধারিত চারটি পিলারের মধ্যে তিনটি নির্মাণ সম্পন্ন হলেও একটি এখনো অসম্পূর্ণ। ফলে সেতুর মূল কাঠামোর কাজ শুরু করা যায়নি। কনস্ট্রাকশন সাইডে নিম্নমানের পাথর ও বালু-মাটি মিশ্রিত পাথর দেখা গেছে। ব্যবহৃত রড দীর্ঘ সময় খোলা থাকায় সেগুলোতেও মরিচা ধরেছে। এতে নির্মাণমান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রব্বানী বলেন, সাঁকো ভেঙে ফেলার পর থেকেই দুর্ভোগে আছি। সেতুর কাজ অনেক ধীরগতিতে চলছে।
কলেজছাত্র মামুন ইসলাম বলেন, স্কুল-কলেজে যেতে প্রতিদিন নদী পার হতে হয়। পানি বাড়ায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।
ভ্যানচালক আব্দুল হাকিম বলেন, থেমে থেমে কাজ চলছে। এক সপ্তাহ কাজ হলে পরের দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকে।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক আল আমিন খন্দকার বলেন, সেতুর নির্মাণে শুরু থেকেই অনিয়ম চলছে। ঢালাইয়ের কাজে দিনাজপুরের ব্ল্যাক স্টোন বা সমমানের পাথর ব্যবহারের কথা থাকলেও মাটিযুক্ত নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব অনিয়ম এলজিইডির ইঞ্জিনিয়ারকে জানালে তিনি উল্টো মামলার হুমকি দেন। এই এলাকায় কাজ না করার কথা বলেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি আরিফ ইসলাম বলেন, আমি এখানে ১৫ দিন আগে এসেছি। ইতিপূর্বে এখানে কী হয়েছে সে সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আপনাদের অভিযোগগুলো আমি ঠিকাদারকে জানাবো।
দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী শাহরিয়ার ইসলাম শাকিল বলেন, সময় বাড়ানো হয়েছে। আকস্মিক বৃষ্টিপাতের কারণে টেম্পোরারি সেতুটি নষ্ট হয়ে গেছে। এটি পুনরায় নির্মাণ করে সচল করা হবে।