শিরোনাম
◈ আন্দোলনের পর সেনানিবাসে আশ্রয়: ২৪ রাজনীতিবিদ কে কোথায় ◈ বৃক্ষমেলায় হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরণ, আতঙ্কে এলাকাবাসী ◈ আজ পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসবে বিএনপি ও জামায়াত ◈ ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ জানাল আরব আমিরাত ◈ ​বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য: প্রয়োজন বাণিজ্য কূটনীতি ◈ বেনাপোল বন্দর উদ্ভীদ সংগনিরোধ ভবনে ল্যাবে জনবল শুণ্য, পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধে ঝুকিতে কৃষিক্ষাত! ◈ জাতিসংঘের সতর্কবার্তা: বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো ◈ আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে : নাহিদ ইসলাম ◈ জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব: সন্দেহ হলেই বাতিল ভিসার আবেদন ◈ অবশেষে গাজায় প্রবেশ করছে ত্রাণবাহী ট্রাক

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২৫, ০১:০০ দুপুর
আপডেট : ২৩ মে, ২০২৫, ১১:০৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুই শতাধিক কিশোর গ্যাং এর কাছে অসহায় চট্টগ্রামবাসী

ডেস্ক রিপোর্ট : চট্টগ্রামের হালিশহরে ১৮ বছর বয়সি কলেজছাত্র ওয়াহিদুল হককে হত্যার ঘটনায় কিশোর গ্যাং সংস্কৃতির ভয়াবহতা আরেক বার নগরবাসীর উন্মোচিত হয়েছে। তবে এ হত্যাকাণ্ড শুধু দুই কিশোর গ্যাংয়ের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয়, বরং এর গভীরে রয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়া, প্রশাসনিক নীরবতা এবং এক দানবীয় পৃষ্ঠপোষকতার জাল।

পুলিশ বলছে, ওয়াহিদুল ছিলেন ‘বিংগু’ নামের এক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। প্রতিপক্ষ গ্যাং ‘পাইথন’ তাকে বাসা থেকে ডেকে এনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। ছুরিকাঘাতের পর আহত ওয়াহিদুল রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াতে থাকলেও তার রেহাই মেলেনি। আবারও তাকে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়, যেখানে তার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসার পরও হামলা থামে না।

ওয়াহিদুলের বাবা মোহাম্মদ এসহাক বলেন, ‘আমার ছেলে ঐ গ্যাংয়ে যেতে রাজি হয়নি, এজন্যই তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। খুনিদের ফাঁসি চাই আমি।’ সংশ্লিষ্টরা বলেন, চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাং এখন আর শুধুই কয়েক জন বখাটে কিশোরের দল নয়, এটি একটি বিস্তৃত ও সুসংগঠিত অপরাধপ্রবণ সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামো, যা বিকশিত হয়ে ওঠার পেছনে কাজ করেছে রাজনৈতিক আশ্রয়, পুলিশের নীরবতা, সামাজিক অজ্ঞতা এবং শিক্ষায় অব্যবস্থা। নিহত কিশোর ওয়াহিদুল হক এই কাঠামোরই সর্বশেষ শিকার।

পাইথনের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘যুবদল নেতা :
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘পাইথন’ গ্যাংয়ের মদতদাতা মো. আসলাম, যিনি নিজেকে যুবদল নেতা বলে পরিচয় দেন। আসলাম একসময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ঘনিষ্ট হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি নিজেকে যুবদলের নেতা হিসেবে জাহির করেন। তবে যুবদলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, নয়াবাজার এলাকায় আসলাম নামে কোনো যুবদল নেতা নেই। কেউ যদি দলের নাম ব্যবহার করে অপরাধ করে, তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে কারো পক্ষে এলাকা জুড়ে একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। কে বা কারা আসলামকে রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে আড়াল দিয়ে রেখেছে সেটা সকলেই জানে।

প্রশাসনের নীরবতা : ‘বড় ভাইদের’ ছায়ায় অপরাধচক্র

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নগর জুড়ে ২০০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয়, যাদের মোট সদস্যসংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪০০। প্রতিটি গ্যাংয়ের পেছনে রয়েছেন একজন করে ‘বড় ভাই’, যারা রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রভাবশালী বলয় থেকে তাদের রক্ষা করেন। গত ছয় বছরে কিশোর গ্যাং-এর সঙ্গে জড়িত ৫৪৮ জন অপরাধীর তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়, এতসংখ্যক অপরাধী চিহ্নিত হওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন তাদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না? স্থানীয়রা বলছেন, বহু আগে থেকেই মাদক, ছিনতাই ও সন্ত্রাসে লিপ্ত এই কিশোররা এলাকায় অবাধে চলাফেরা করছে। পুলিশ হয় অবহেলা করছে, নয়তো তাদের ‘মদত’ দিচ্ছে।

রাজনীতি, স্কুল ফাঁকি, পর্ণোগ্রাফি : গ্যাং সংস্কৃতির জন্মভূমি

২০২৩ সালে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের করা এক জরিপে উঠে আসে, স্কুলে অনুপস্থিত ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো না কোনো অপরাধে জড়িত। দিনের বেলায় ‘স্কুল টাইম’-এ এই কিশোররা যুক্ত হচ্ছে মাদক, পর্ণোগ্রাফি, অনলাইন জুয়া, ছিনতাই ও সাইবার অপরাধে। অভিভাবক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ সবাই মিলে যেখানে একটি কিশোরকে সঠিক পথে ফেরানোর কথা, সেখানে রাজনীতির ছত্রছায়ায় তারা হয়ে উঠছে ছুরি-রড হাতে ‘গ্যাংস্টার’।

ক্ষমতার পালাবদলের পর আসলামের উত্থান

স্থানীয় সূত্র জানায়, মো. আসলাম আগে আওয়ামী লীগের এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনুসারী ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি যুবদলের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব খাটাতে শুরু করেন। বর্তমানে ‘পাইথন’ ও অন্যান্য গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওয়াহিদুল হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে প্রথম বারের মতো এই গ্যাং নেটওয়ার্ক উন্মোচিত হচ্ছে, তবে এখনো আসলামের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সুত্র :ইত্তেফাক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়