২০১৫ সালে শখের বসে ফরিদপুরের মো. ফরিদ শেখ ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি হরিণ কিনে আনেন। শুরুতে এটি ছিল কেবলমাত্র একটি সৌখীনতা, তবে তিন বছর পরে তিনি লক্ষ্য করেন যে হরিণ পালন একটি লাভজনক কাজ হতে পারে। তখন থেকেই তিনি এটি বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন।
প্রথমে সৌখীনভাবে হরিণ পালনের জন্য একটি লাইসেন্স সংগ্রহ করেন। পরে সেই লাইসেন্স বাণিজ্যিক লাইসেন্সে রূপান্তর করেন এবং একটি হরিণ খামার গড়ে তোলেন। বর্তমানে তার খামারে ৯টি হরিণ রয়েছে—চারটি পুরুষ, চারটি নারী এবং একটি নবজাতক হরিণ। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এই খামার পরিচালনা করছেন এবং হরিণ পালন করেই এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা।
ফরিদ শেখ জানান, প্রথমে তিনি একটি ভিডিও দেখে হরিণ লালন-পালনের প্রতি আগ্রহী হন এবং এরপরই সিদ্ধান্ত নেন লাইসেন্স নিয়ে হরিণ পালনের। লাইসেন্স করে তিনি ঢাকার মহাখালী থেকে দুটি হরিণ আনেন, যার জন্য তার খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। মাত্র দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যেই তার খামারে প্রথমবারের মতো হরিণের বাচ্চা জন্ম নেয়। এরপর ধীরে ধীরে হরিণের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে যখন হরিণের সংখ্যা ১২-তে পৌঁছে, তখন বন বিভাগ তাকে বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেয়।
হরিণের জন্ম-মৃত্যু, চিকিৎসা, বিক্রয় সবকিছুতেই বন বিভাগের অনুমোদন নিতে হয়। ফরিদ শেখ বলেন, হরিণ কিনতে হলে বন বিভাগের অনুমতি লাগে, এমনকি অসুস্থ হলেও তাদের জানাতে হয়। চিকিৎসার জন্য চিড়িয়াখানার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে আনা হয়, এবং হরিণের রেজিস্ট্রেশনও বাধ্যতামূলক।
হরিণ লালন-পালনের খরচ তুলনামূলকভাবে কম। প্রতিদিন একটি হরিণের খাবারে খরচ হয় আনুমানিক ১৫০ টাকা। তাদের খাবারের মধ্যে নেপিয়ার ঘাস, কলমি ঘাস, ভূষি ইত্যাদি থাকে। সাধারণত ছাগলের মতোই খাবার দেওয়া হয়। হরিণ খুব কমই অসুস্থ হয়, ফলে চিকিৎসা ব্যয়ও নেই বললেই চলে।
এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০টি হরিণ বিক্রি করেছেন। প্রতিজোড়া হরিণ বিক্রি করে তিনি এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন। এই অর্থ দিয়ে তিনি একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের ভরণপোষণ, খাওয়াদাওয়া এবং পড়ালেখার খরচ বহন করেন।
ফরিদপুর জেলায় বাণিজ্যিকভাবে হরিণ পালনের এমন খামার আর নেই। প্রতিদিন বিকালে শত শত মানুষ তার খামারে হরিণ দেখতে আসেন। ফরিদ শেখ জানান, হরিণ পালনের মাধ্যমে যেমন একটি আয় রোজগারের পথ তৈরি হয়েছে, তেমনি মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছেন। তিনি বলেন, কেউ যদি হরিণ পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করে, তবে তিনি নিজে থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। উৎস: সময়নিউজটিভি।