মনজুর এ আজিজ : যাত্রী ও কার্গো সেবায় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) তৃতীয় টার্মিনালে বিমানের পাশাপাশি আরেকটি আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারকে অনুমোদন দিতে পারে সরকার। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহেই আসতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
সূত্র মতে, নতুন নির্মিত তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা নিয়ে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (সিএএবি) এবং একটি জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে তিনদিনব্যাপী আলোচনার চূড়ান্ত পর্ব রোববার বিকেলে শুরু হয়েছে। সিএএবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দুই অধিবেশনের সভাপতিত্ব করছেন সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, আর উপদেষ্টা বশির শেষ দিনের আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন। এতে অংশ নিচ্ছেন আন্তর্জাতিক অর্থ করপোরেশন (আইএফসি)সহ সব স্টেকহোল্ডারের প্রতিনিধিরা।
সিএএবি সূত্র জানায়, বিমানের জন্য দুই বছরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দায়িত্ব দেওয়ার নীতি সিদ্ধান্ত কনসোর্টিয়ামের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। তারা আরও বিস্তৃত পরিচালন ও রাজস্ব ভাগাভাগির অধিকার চাচ্ছে। ফলে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ব্যবস্থায় বিমানের সাথে টার্মিনাল পরিচালনাকারী বেসরকারি অংশীদারের মধ্যে একটি সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) স্বাক্ষরিত হবে।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের মতে, যদি বিমান দুই বছরের মধ্যে কর্মদক্ষতার মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে অপারেটর বিমানের পাশাপাশি একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানিকে নিয়োগ দিতে পারবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিষয়টি বহু বছর ধরে বিতর্কিত। অপসারিত পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান এ দায়িত্ব পেতে পারে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বিমানের সেবার মান নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। বর্তমানে বিমানই বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরের একমাত্র গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার, প্রায় ৪০টি বিদেশি এয়ারলাইন্সের সেবা দিচ্ছে। এ খাতে তাদের বার্ষিক আয় ১,০০০ থেকে ১,২০০ কোটি টাকা।
যদিও ২১,৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তৃতীয় টার্মিনালটি জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)’র বড় অর্থায়নে তৈরি হয়েছে। ফলে এইচএসআইএ-এর যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বছরে ২ কোটি ৪০ লাখে এবং কার্গো পরিবহন সক্ষমতা ১২ লাখ টনে উন্নীত হবে। ২,৩০,০০০ বর্গমিটার আয়তনের এই স্থাপনাটিতে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক থাকবে। এতে বিমানের একার পক্ষে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সাপোর্ট দেয়া কঠিন হবে।
অবশ্য কর্মকর্তারা দাবি করেন, নতুন সরঞ্জাম ও জনবল যুক্ত হওয়ায় বিমানের সেবার মান উন্নত হয়েছে। তবে যাত্রী ও এয়ারলাইন্সগুলো এখনও দেরি, অদক্ষতা এবং মাঝেমধ্যে চুরির অভিযোগ তুলে আসছে।
এদিকে সাবেক সিএএবি চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, এইচএসআইএ কর্তৃপক্ষের করা এক জরিপে ৯৩ শতাংশ এয়ারলাইন্স তৃতীয় টার্মিনালে একাধিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে বিমানের কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাসী। তাদের দাবি, ২০২৩ সালে তারা ৫৭,০০০টিরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে এবং গত এক বছরে ৩,৬০০ নতুন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট কেনায় ১,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। আরও ক্রয় ও জনবল নিয়োগ চলছে। ফলে বিমান মানসম্মত সেবা দিতে প্রস্তুত।
একজন মুখপাত্র জানান, বিমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্টে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র যুক্ত হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ৭০ প্রকার নতুন সরঞ্জাম যুক্ত হবে। তাছাড়া বিদেশি অপারেটরের হাতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ছেড়ে দিলে ‘রাষ্ট্রীয় রাজস্বে বড় ক্ষতি’ হবে।
এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন গণমাধ্যমকে আরও বলেন, আমরা একটি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হলো সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সেবা উন্নত করা। আমরা সমন্বিত একটি পদ্ধতি চাই। আমরা চাই না কোনোভাবে বিমান প্রতিযোগিতাহীন হয়ে যাক, তবে একইসাথে চাই না, যাত্রীসেবাও নষ্ট হয়ে যাক।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ হয়তো এখনই সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারবে না, কিন্তু নতুন টার্মিনালে অন্তত মর্যাদাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য মানের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। তাই আমরা প্রতিযোগিতা আনার পরিকল্পনা করছি।