বিবিসি: গ্রীষ্মকাল এলেই ভারতের চিকিৎসকদের কাছে এটি সবচেয়ে বেশি শোনা প্রশ্নগুলোর একটি। বিশেষত মুম্বাইয়ের খ্যাতনামা ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. রাহুল বাক্সি বলেন, ‘আম ভারতীয় গ্রীষ্মের অপরিহার্য অংশ। মিষ্টি আর সুস্বাদু এই ফল খেতে রোগীরা চান, কিন্তু বিভ্রান্তিও প্রচুর।‘
কেউ মনে করেন, আম একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে। আবার কেউ বলেন অতিরিক্ত আম খেলে নাকি ডায়াবেটিসও সেরে যেতে পারে। সত্যিটা মাঝামাঝি কোথাও। বাস্তবে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে আমের মৌসুম শেষে ফলোআপে দেখা যায়, তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়েছে অতিরিক্ত আম খাওয়ার কারণে।
তবে নতুন ভারতীয় গবেষণা বলছে—আম হয়তো এতটা ভয়ের কিছু নয়। বরং নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারীও হতে পারে।
দুটি নতুন ভারতীয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নাশতায় রুটি বাদ দিয়ে আম খেলে রক্তে শর্করার ওঠানামা কমে এবং বিপাকীয় স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত প্রথম গবেষণায় ৯৫ জন অংশ নেন। সেখানে দেখা যায়, জনপ্রিয় তিন জাতের ভারতীয় আম—সফেদা, দাশেরি ও ল্যাংড়া—সাদা পাউরুটির তুলনায় সমান বা কম গ্লাইসেমিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খাবারের পর রক্তে শর্করার ওঠানামা আম খাওয়ার পর কম দেখা গেছে।
জার্নাল অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডার্স-এ প্রকাশিত দ্বিতীয় গবেষণাটি দিল্লির ফোর্টিস সি-ডক সেন্টারে পরিচালিত হয়। সেখানে ৩৫ জন টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীকে আট সপ্তাহ ধরে নাশতায় রুটি বাদ দিয়ে প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম আম খাওয়ানো হয়। ফলাফল—রক্তে শর্করা, এইচবিএ১সি, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, ওজন, কোমরের মাপ এবং স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলে উন্নতি দেখা গেছে।
গবেষণা দলের নেতৃত্বে থাকা প্রফেসর অনুপ মিশ্রা বলেন, ‘আমের ছোট পরিমাণকে রুটির বিকল্প হিসেবে নাশতায় ব্যবহার করলে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না, বরং উপকার হয়। তবে নিয়ন্ত্রণ জরুরি—এটা অসীম পরিমাণ আম খাওয়ার লাইসেন্স নয়।‘
ডা. বাক্সি জানান, যদি রোগীর গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে তিনি রোগীদের পরিমিত আম খেতে উৎসাহ দেন। প্রতিদিন আধা আম প্রায় ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট দেয়। দিনে এক বা দুইবার খাওয়া যেতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করেন—‘আম মাঝে খাবেন, খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে নয়। প্রোটিন বা আঁশযুক্ত খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে খেতে হবে। জুস বা মিল্কশেক আকারে আম খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
আম হয়তো এতটা ভয়ের কিছু নয়। বরং নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারীও হতে পারে।