শিরোনাম
◈ মারা গে‌লেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার ও কোচ বব সিম্পসন ◈ শেখ মুজিব হত্যা ও হাসিনার পতনের পর ভারতের প্রতিক্রিয়ায় যে ফারাক ◈ ডাক্তাররা কি ঔষধ কোম্পানির দালাল, প্রশ্ন আসিফ নজরুলের (ভিডিও) ◈ বিতর্কিত নির্বাচন হলে দেশ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগোবে : সালাহউদ্দিন আহমদ ◈ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুখবর: নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে আম খাওয়ায় উপকার দেখাল ভারতীয় গবেষণা ◈ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দেশজুড়ে জন্মাষ্টমী পালন, সম্প্রীতি রক্ষায় সজাগ থাকার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ◈ কোচিং সেন্টারে মিলল বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক, ঘিরে রেখেছে সেনাবাহিনী ◈ কোনো চাঁদাবাজকে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের যন্ত্রপাতির মেয়াদ শেষ, চালুতে অনিশ্চয়তা ও অতিরিক্ত ব্যয়ের আশঙ্কা ◈ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকাশ করা হয়নি উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদের হিসাব

প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ০১:৫৯ দুপুর
আপডেট : ১৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হার্ট অ্যাটাকের নীরব ঘাতক রুখবে ভিটামিন ‘কে’: গবেষণায় নতুন দিগন্ত

আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হৃদরোগের প্রকোপ। বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপকে এতদিন মূল খলনায়ক হিসেবে দেখা হলেও, বিজ্ঞানীরা এখন পুষ্টির অভাবকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন। সম্প্রতি এক যুগান্তকারী গবেষণায় দেখা গেছে, সহজলভ্য একটি ভিটামিন আমাদের হৃদপিণ্ডকে রক্ষা করতে পারে নীরব ঘাতকের হাত থেকে। আর সেই রক্ষাকবচের নাম ভিটামিন ‘কে’।

বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি: নেপথ্যের কারণ কী?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ হৃদরোগজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন, যা বৈশ্বিক মৃত্যুর প্রায় ৩১ শতাংশ। এর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে ‘এথেরোস্ক্লেরোসিস’ নামক একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের রক্তনালী বা ধমনির ভেতরের দেয়ালে ক্যালসিয়াম, ফ্যাট ও অন্যান্য পদার্থ জমে এক ধরনের শক্ত আস্তরণ (প্লেক) তৈরি করে। ফলে ধমনি সংকীর্ণ ও শক্ত হয়ে যায়, যা রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। এর চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এখানেই ভিটামিন কে-এর গুরুত্ব সামনে চলে আসে।

গবেষণার নতুন আলো: ভিটামিন কে১ (ফাইলোকুইনোন)
দ্য আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা হৃদরোগ প্রতিরোধে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। গবেষণাটি ছিল বেশ বিস্তৃত:

  • অংশগ্রহণকারী: ৭০ বছরের বেশি বয়সী ১৪৩৫ জন বয়স্ক ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।

  • সময়কাল: দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে তাদের স্বাস্থ্য ও খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করা হয়।

  • মূল পর্যবেক্ষণ: গবেষকরা দেখতে পান, যারা নিয়মিত তাদের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন কে১ সমৃদ্ধ খাবার রেখেছেন, তাদের হৃদরোগজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

  • বিস্ময়কর ফলাফল: গবেষণায় দেখা যায়, পর্যাপ্ত ভিটামিন কে১ গ্রহণকারীদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় প্রায় ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কম।

কীভাবে কাজ করে এই জাদুকরী ভিটামিন?
ভিটামিন কে-কে এতদিন কেবল রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্যকারী উপাদান হিসেবেই জানা হতো। কিন্তু নতুন গবেষণা প্রমাণ করেছে, এর ভূমিকা আরও ব্যাপক।

আমাদের শরীরে ‘ম্যাট্রিক্স জিএলএ প্রোটিন’ (MGP) নামক একটি উপাদান রয়েছে। এই প্রোটিনের প্রধান কাজ হলো রক্তনালীতে ক্যালসিয়াম জমাট বাঁধতে বাধা দেওয়া। কিন্তু এই প্রোটিন নিজে থেকে সক্রিয় হতে পারে না। একে সক্রিয় করার জন্য প্রয়োজন হয় ভিটামিন কে।

যখন শরীরে ভিটামিন কে-এর ঘাটতি দেখা দেয়, তখন MGP প্রোটিন নিষ্ক্রিয় থাকে। ফলে ক্যালসিয়াম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ধমনির দেয়ালে জমতে শুরু করে এবং এথেরোস্ক্লেরোটিক প্লেক তৈরি হয়, যা করোনারি আর্টারি ডিজিজ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ, ভিটামিন কে একপ্রকার ‘সুইচ’ হিসেবে কাজ করে, যা ক্যালসিয়ামকে হাড়ের জন্য ব্যবহার করতে এবং ধমনিতে জমতে বাধা দিতে সাহায্য করে।

ভিটামিন কে-এর সেরা উৎসগুলো কী কী?
ভিটামিন কে মূলত দুই প্রকার—ভিটামিন কে১ (ফাইলোকুইনোন) এবং ভিটামিন কে২ (মেনাকুইনোন)। ভিটামিন কে১ পাওয়া যায় উদ্ভিদ থেকে, আর কে২ পাওয়া যায় প্রাণীজ ও ফারমেন্টেড খাবার থেকে। হৃদরোগ প্রতিরোধে ভিটামিন কে১-এর ভূমিকা বিশেষভাবে প্রমাণিত।

এর প্রধান উৎসগুলো হলো:

  • গাঢ় সবুজ শাক-সবজি: পালং শাক, কেল (Kale), শালগম শাক, লেটুস, ব্রকলি, বাঁধাকপি এই ভিটামিনের সেরা উৎস।

  • অন্যান্য সবজি: কলার মোচা, মটরশুঁটি, শতমূলী (Asparagus)।

  • ফল: আঙুর, ব্লুবেরি, অ্যাভোকাডো, কিউই, ডালিম অল্প পরিমাণে ভিটামিন কে১ সরবরাহ করে।

  • উদ্ভিজ্জ তেল: সয়াবিন তেল, ক্যানোলা তেল এবং জলপাই তেলেও এই ভিটামিন পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সতর্কতা
পুষ্টিবিদ ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সবুজ শাক-সবজি রাখার ওপর জোর দিচ্ছেন। প্রতিদিন এক কাপ রান্না করা সবুজ শাক অথবা এক বাটি সালাদ আপনার ভিটামিন কে-এর চাহিদা পূরণে অনেকটাই সাহায্য করতে পারে।

তবে একটি বিষয়ে সতর্কতা জরুরি। যারা রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ (যেমন: ওয়ারফারিন) গ্রহণ করেন, তাদের জন্য ভিটামিন কে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক। কারণ ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, যা এই ধরনের ওষুধের কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। প্রাকৃতিক খাবার থেকে ভিটামিন কে গ্রহণ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, তবে সাপ্লিমেন্টের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হবে।

হার্ট অ্যাটাক কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিনের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার परिणाम। নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপমুক্ত জীবন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে আপনিও আপনার হৃদপিণ্ডকে রাখতে পারেন সুরক্ষিত ও সতেজ। তাই আজই আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করুন একমুঠো সবুজ, আর দূরে রাখুন হৃদরোগের ঝুঁকি। সূত্র: এবিপি লাইভ

 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়