বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়, যা শারীরিক সক্ষমতা, হাড়ের গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ৫০ বছর বয়স পার করার পর নারী-পুরুষ উভয়েরই কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি দেখা দেয়, যা পূরণ না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে।
বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, “পঞ্চাশোর্ধ বয়সীদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে কিছু ভিটামিনের শোষণ ক্ষমতা কমে যায়। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করাটা খুবই জরুরি।”
তিনি জানান, পঞ্চাশোর্ধ বয়সীদের জন্য যে তিনটি ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো:
১. ভিটামিন ডি
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয় বেড়ে যায়। ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং হাড়কে মজবুত রাখে। সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া গেলেও বয়স বাড়লে ত্বক এই ভিটামিন কম শোষণ করে। ফলে হাড়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে এর ঘাটতি পূরণ করা প্রয়োজন।
২. ভিটামিন বি১২
বয়স বাড়লে হজম শক্তি কমে যায় এবং পাকস্থলীর অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যাওয়ায় শরীর খাবার থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন বি১২ শোষণ করতে পারে না। এই ভিটামিনটি স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যক্রম, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং রক্তকণিকা তৈরির জন্য অত্যন্ত জরুরি। এর অভাবে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, অবসাদ এবং স্নায়বিক দুর্বলতার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. ক্যালসিয়াম
হাড়ের গঠন এবং শক্তি বজায় রাখার জন্য ক্যালসিয়াম একটি অপরিহার্য খনিজ। বিশেষ করে নারীদের মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতির কারণে হাড়ের ক্ষয় দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। এই সময়ে হাড়ক্ষয় রোগ (অস্টিওপোরোসিস) প্রতিরোধে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা প্রায় আবশ্যক।
চিকিৎসকের পরামর্শ আবশ্যক
ডা. নাসির উদ্দিন বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেন, “এই সাপ্লিমেন্টগুলো গ্রহণের আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, প্রত্যেকের শরীরের অবস্থা, ঘাটতির পরিমাণ ও প্রয়োজন ভিন্ন। চিকিৎসকই সঠিক ডোজ ও গ্রহণের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবেন।”
অন্যান্য জরুরি পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, শুধু সাপ্লিমেন্টের ওপর নির্ভর করলেই চলবে না। এর পাশাপাশি পঞ্চাশোর্ধ বয়সীদের সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করা এবং প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বয়সজনিত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করে সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবন নিশ্চিত করতে পারে।
সূত্র: বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মো. নাসির উদ্দিনের সাক্ষাৎকার অবলম্বনে।