শিরোনাম
◈ এবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে কোপালেন এনসিপি নেতা ◈ কমলাপুরে ট্রেনের শৌচাগারে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ, কর্মচারী আটক ◈ ভারতীয় পাইলটকে আটককারী সেই পাকিস্তানি মেজর টিটিপির হামলায় নিহত ◈ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বাড়লো ◈ ‘তোমাদের হাতে ১২ ঘণ্টা সময় আছে’, এবার ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও ইরানি জেনারেলের ফোনকল ফাঁস ◈ এবার ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে হামলা ◈ আজ নতুন গিলাফে সজ্জিত হবে কাবা ◈ ইউনূসের আহ্বান: অপতথ্য দমনে মেটাকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে ◈ এনসিপিকে ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ দিতে কোনো আইনি বাধা নেই: ১০১ আইনজীবীর বিবৃতি ◈ চীন সফরে তৃতীয় দিনেও ব্যস্ত সময় পার করলো বিএনপির প্রতিনিধি দল — বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা ও হাই-টেক খাতে সহযোগিতার আশ্বাস

প্রকাশিত : ২৬ এপ্রিল, ২০২৩, ০৭:১৬ বিকাল
আপডেট : ২৬ এপ্রিল, ২০২৩, ০৭:১৬ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পথের ধারে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সোনালু ফুল 

সোনালু ফুল 

সনতচক্রবর্ত্তী, ফরিদপুর: গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সোনাঝরা সোনালু ফুল। সবুজ কচি পাতার ফাঁকে হলুদ বর্ণের সোনালু ফুল প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে। ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে এবং সড়ক-মহাসড়ক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বন জঙ্গলে গ্রামীণ রাস্তার ধারে ছোট বড় সোনালু গাছ দেখতে পাওয়া যায়।

প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজাতে এবং প্রকৃতি পরিবেশের শোভা বর্ধনে সোনালু গাছ সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো হয়ে থাকে। কালের পরিক্রমায় এ গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে প্রায়। খুব কম সংখ্যক গাছ চোখে পড়ে বর্তমানে।

শীতে সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে সোনালু গাছ থাকে পত্র শুন্য এবং বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার পূর্বে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মকালে যখন সব গাছে একসাথে সোনালী ফুল ফোটে, তখন মনে হয় সোনালী আলোকচ্ছটায় চারপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। গ্রীষ্মে গাছের শাখা-প্রশাখা জুড়ে ঝুলন্ত মঞ্জুরিতে সোনালী হলুদ রঙের ফুল ফুটে এবং এর ব্যাপ্তি থাকে গ্রীষ্ম কাল পুরো সময় জুড়ে।

এই মৌসুমে গাছটি সব সবুজ ঝেড়ে ফেলে উত্ফুল্ল হলুদ ছড়িয়ে দেয়। পথচারীরা এ ফুলের বৈচিত্রতায় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েই থাকে।

যুগের মাইকেল কবিতায় লিখেছেন, হায়, কর্ণিকা অভাগা/ বরবর্ণ বৃথা যায় সৌরভ বিহনে/ সতীত্ব বিহনে যথা যুবতীযৌবন। মেঘদূতম কাব্যে যজ্ঞ রমণীদের কর্ণ শোভা সোনালু ফুলই। এ জন্য মল্লিনাথ লিখেছেন, কর্ণিকার বৃক্ষের সমীপে যদি সুন্দরি যুবতী আহ্লাদে নৃত্য করে তবে বৃক্ষের গর্ব হয়।

সোনালুকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুবই ভালোবাসতেন। শান্তিনিকেতনে একটি রাস্তার দুই ধারে সোনালু গাছ রোপণ করেছিলেন। সেই রাস্তার নাম দিয়েছেন সোনাঝুরি। এখন শান্তিনিকেতনের দর্শনীয় স্থান এই সোনাঝুরি।

সোনালী রঙের ফুলের বাহার থেকেই সোনালু নামের নামকরণ। একেক দেশে এটি একেক নাম নিয়ে পরিচিত। এর শুদ্ধ নাম কর্ণিকার। এছাড়া আরববক, কৃতমান, রাজবৃক্ষ, চতুরঙ্গুল, অবঘাতক নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের কোথাও কোথাও বান্দরলাঠি, সোদেল, সোমরাল নামেও পরিচিত।

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। হিন্দিতেও এর নাম অমলতাস। ইংরেজি ভাষায় একে বলা হয় গোল্ডেন শাওয়ার। সোনালু থাইল্যান্ডের জাতীয় ফুল। সেখানে এটি রাচাফ্রুরুয়েক ওখুন নামেও সমাদৃত। তবে বাংলাদেশে সোনালু নামেই বেশি পরিচিত।

সোনালু গাছটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। এর উচ্চতা প্রায় দশ/পনেরো ফুট। চৈত্র মাসে সব পাতা ঝেড়ে ফেলে গাছটি একদম ন্যাড়া হয়ে যায়। কিন্তু বঙ্গদেশে বৈশাখ মাসে প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয় জারুল-কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে। তবে হরিদ্রাবর্ণের এই ফুলের নাচ কাঠখোট্টা মানুষকেও মুগ্ধ করে।

এর যখন ফুল ফোটে তখন ঝাড়বাতির মতো বৃক্ষ থেকে এক-দেড় হাত ঝুলে পড়ে। সরিষা রংয়ের, সোনা রংয়ের প্রতিটি ফুলে থাকে পাঁচটি পাপড়ি ও দশটি পুংকেশর। ফুলগুলো এক ইঞ্চির মতো প্রশস্ত। দীর্ঘ মঞ্জুরিদণ্ড এ ফুলকে আরো বেশি মোহনীয় করেছে। সোননালুর গর্ভকেশর সবুজ, কাস্তের মতো বাঁকা। ফুলের আকৃতি অনেকটা আঙুলের ডগার মতো। এ কারণে অনেকে সোনালুকে কর্ণিকার নামে ডাকে।

সোনালুর লাঠির মতো ফল বানরের প্রিয় খাদ্য। আর দুষ্টু ছেলেরা এই ফল নিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলে। বানরকে উদ্দেশ করে লাঠি ছুড়ে দেয়। এ জন্য সোনালুর আরেক নাম বান্দরলাঠি। এই লাঠি দুই-তিন হাত লম্বা হয়। একেবারে সুগোল এই লাঠির ভেতরে অনেক বীজ থাকে। এ বীজ থেকে চারা হয়।

আবার শেকড় থেকেও চারা প্রসব করে। গাছটির ধূসর মসৃণ বাকল এবং পাতায় ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এ গাছের বাকল এবং পাতায় প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এটি ডায়রিয়ায় ও বহুমূত্র ব্যবহৃত হয়। পাতার বা ছালের রসে ক্ষত ধুলে ক্ষত দ্রুত আরোগ্য হয়। কুষ্ঠ রোগেও এটি ব্যবহৃত হয়। বানরলাঠি একটি অনেক উপকারী উদ্ভিদ।

আমির চারু বাবলু নামে এক সাংস্কৃতিক ব্যক্তি বলেন, প্রকৃতিতে এখন বইছে গ্রীষ্ম ঋতু। চারদিকে প্রচণ গরম। এর মাঝে গাছে গাছে ফুটেছে সোনালু ফুল। বাংলা সংস্কৃতিতে এসব ফুল ফুটে সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন। সোনালু ফুল যে কারো চোখে ভালো লাগে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সড়কের দুই পাশে এ সব বৃক্ষ রোপণের আহ্বান জানান তিনি। সম্পাদনা: ইস্রাফিল ফকির 

প্রতিনিধি/আইএফ 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়