শিরোনাম
◈ ‘বিএনপিকে আটকাতে সংস্কারের নামে নতুন প্রস্তাব সামনে আনা হচ্ছে’ ◈ মধুপুর গড়ে হারিয়ে যাওয়া ময়ূর ফিরে আসছে: শালবন পুনরুদ্ধারে নতুন আশার আলো ◈ কুমিল্লায় জুতা ব্যবসায়ী টিপু হত্যা: দুইজনের যাবজ্জীবন, ছয়জনের ১০ বছর কারাদণ্ড ◈ নোয়াখালীতে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে নারী ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের অভিযোগ ◈ “পিন্ডির জিঞ্জির ভেঙেছি দিল্লির দাসত্ব করতে নয়” — টাঙ্গাইলে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ◈ নারী এশিয়া কাপে চীন ও দ‌ক্ষিণ কো‌রিয়া গ্রুপে বাংলাদেশ ◈ ‘মুক্তির উৎসব’ করতে ৭৬ লাখ টাকা চেয়ে ৭০ প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের চিঠি ◈ হ‌লো না ফাইনা‌লে খেলা, কল‌ম্বিয়ার কা‌ছে হে‌রে আর্জেন্টিনার বিদায় ◈ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টানা আটটি ম্যাচে হারালো অ‌স্ট্রেলিয়া ◈ জুলাই আন্দোলনে মারণাস্ত্র ব্যবহার নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক আইজিপি

প্রকাশিত : ২৯ জুলাই, ২০২৫, ১২:৫৯ দুপুর
আপডেট : ২৯ জুলাই, ২০২৫, ০৯:৩০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন সাজাচ্ছে সরকার

মহসিন কবির: আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়ার ঘোষণা রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের। প্রধান উপদেষ্টার দেয়া এই সময়সীমা সামনে রেখেই  মাঠ প্রশাসন সাজাচ্ছে সরকার। 

প্রাথমিকভাবে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপারদের (এসপি) সরানো হবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে সরানো হবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি)। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও প্রশিক্ষণসহ প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারির ১০ থেকে ১২ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- এমন ধারণা মাথায় রেখে প্রস্তুত করা হচ্ছে মাঠ প্রশাসন। শিগগির জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যেখানে তিনি নির্বাচনের সময় সম্পর্কেও জানাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন ছিল লোক দেখানো। সেই অর্থে ১৬ বছর ধরে সাধারণ মানুষ ভোট দেখেনি। সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং ভোটারদের যেন একটি ভালো অভিজ্ঞতা হয়, সেই লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ লাখ সদস্যকে। পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নতুন করে নেওয়া হচ্ছে ১৭ হাজার সদস্য। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে চায় সরকার। পাশাপাশি ডিসি, এসপি ও ইউএনওদের প্রয়োজনীয় রদবদলও সম্পন্ন করা হবে এ সময়কালের মধ্যে।

নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি গতকাল রাতে আমাদের সময়কে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন পরিবেশ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। এর অংশ হিসেবে মাঠ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। ডিসি-এসপি-ইউএনওদের দায়িত্বে পরিবর্তন আসতেই পারে। অন্তর্বর্তী সরকার মাঠ প্রশাসন সাজাতে সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেবে, এটাই স্বাভাবিক।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে শুধু মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজালেই হবে না। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি মানুষের আস্থাও বাড়াতে হবে। মানুষ দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেননি। তিনি যোগ করেন, কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারাটাই নিরপেক্ষতা নয়। ভোটের আগে প্রচারণার অবাধ পরিবেশ, সবার জন্য সমান মাঠ প্রস্তুত রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে চরিত্র হননের মতো অনাকাক্সিক্ষত কা-সহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এসব কাজ হতে হবে ইসির নিয়ন্ত্রণে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হিসেবে বিবেচিত ডিসি পর্যায়ে কিছুদিনের মধ্যেই রদবদল শুরু হতে পারে। তফসিল ঘোষণার সময় এ পদে ব্যাপক রদবদল হবে। এ লক্ষ্যে এখন যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই বা ফিট লিস্ট করা হচ্ছে। তফসিলের পর লটারির মাধ্যমেও রদবদল হতে পারে। বর্তমানে ২৪তম, ২৫তম ও ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা ডিসি পদে দায়িত্বে আছেন।

এর মধ্যে ২৪ ও ২৫তম বিসিএসের কর্মকর্তারা বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের (২০০১-০৬) আমলে চাকরিতে যোগ দেন; ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন এক-এগারোর পর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (২০০৭-০৮) আমলে। মাঠ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ এ পদে যোগ্য কর্মকর্তাদের আনার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ২৮তম বিসিএসের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগের চিন্তাভাবনাও চলছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ডিসি পদে নিয়োগে তদবির রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। সূত্র বলছে, এ কারণেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্তকরণে বিলম্ব হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রথমে হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট জেলার ডিসি পদে পরিবর্তন আসবে। পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলার ডিসি পদেই রদবদল হবে। একইভাবে ফিটলিস্ট হচ্ছে এসপিদেরও। পাশাপাশি পুলিশ পরিদর্শকদের মধ্যে ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনে যোগ্যদেরও তালিকা করা হবে। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ওসির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভোটকেন্দ্রে পুলিশ সদস্যদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছে সরকার। কোথাও কোথাও পুলিশ-প্রশাসন স্থানীয় প্রভাবশালীদের পক্ষে কাজ করে থাকে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে এক থানার পুলিশকে আরেক থানার দায়িত্বে দেওয়া হতে পারে।

সূত্রমতে, ৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এক্ষেত্রে গুরুত্ব বিবেচনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সিসি ক্যামেরা বরাদ্দের ভাবনাও রয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নামে কেউ বা কোনো দল যেন তাদের দলীয় কর্মীকে কেন্দ্রে পাঠাতে না পারে অন্যায্য সুবিধা আদায়ে, সেদিকে নজর দিতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে আলোচনাও হয়েছে।

বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন ছাড়াও ডিসিদের অনেক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়সহ জেলার প্রায় সব সরকারি কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন ডিসি। এসব পদে যারা থাকবেন, তাদের ওপরই জেলার অনেক কিছু নির্ভর করবে। ফলে কেবল নির্বাচন নয়, সব সময়ের জন্যই ডিসি ও এসপির মতো পদগুলোতে নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তা থাকা জরুরি।

নির্বাচনের সময় জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন হয়। অনেক সময় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ভোট বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব থাকে। তাই তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে ভোটের জন্য প্রস্তুত করার কথা রয়েছে। আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে চার দিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হতো। এবার সাত দিনের জন্য মোতায়েন করা হতে পারে। ভোটের সময় ইন্টারনেট পরিষেবায় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সেটিও উঠে এসেছে বৈঠকে।

২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নিবাচনে জালিয়াতির কারণে বিপুল সংখ্যক তরুণ ভোটার ভোট দিতে পারেননি। তাদের একটা বড় অংশ এবারই প্রথম ভোট দেবেন। তাই ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সীদের পৃথক ভোটার তালিকা ও আলাদা ভোটিং বুথ নিয়েও ভাবা হচ্ছে। গত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে যেসব প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন, আগামী নির্বাচনে তাদের বাদ দেওয়া হতে পারে। নির্বাচনে ডিসিদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদেরও আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন নিয়ে আলোচনা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে।

নির্বাচনকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা সাবেক অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, এককভাবে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে না। ডিসি-এসপি ছাড়াও বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইউএনও সবার সম্মিলিত চেষ্টা দরকার। দায় এড়ানোর পরিবর্তে সবাই আন্তরিকভাবে কমিশনকে সহায়তা করলেই কেবল তা সম্ভব। নানামুখী চাপ মোকাবিলায় সব পর্যায়ে নির্মোহ আন্তরিকতা জরুরি।

গত জুনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয় লন্ডনে। ওই বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে- সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের পবিত্র রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। সেভাবেই গোছানো হচ্ছে মাঠ প্রশাসন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বদলির সময় ও প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ পর্যন্ত যেসব আলোচনা হয়েছে তাতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে, এমনটি ধরে নিয়েই প্রস্তুতি চলছে। সর্বাধিক যোগ্য ও পেশাদারদের বাছাই করা হচ্ছে।

জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন ডিসি। তবে আগামী নির্বাচনে ডিসি রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন কিনা, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপনে ডিসি ও ইউএনওদের প্রধান করে কমিটি করার বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। এ সংশোধনী এনে সম্প্রতি ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারাই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়