শিরোনাম
◈ ন্যাশনাল গার্ড কী, কখন ও কেন মোতায়েন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে? ◈ বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ: স্টেডিয়ামে দর্শকদের জন্য বাফুফের কড়াকড়ি নির্দেশনা ◈ প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় চাঙ্গা অর্থনীতি, রিজার্ভ ছুঁই ছুঁই ৩০ বিলিয়ন ডলার ◈ এপ্রিলে নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত ◈ নতুন রাজনীতির পুরোনো ছায়া: আসছে নতুন চক্রান্ত, এনসিপি কি আদৌ পারবে : জিল্লুর রহমান ◈ কো‌নো চাপ না নি‌য়ে জ‌য়ের জন‌্য মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে লড়‌বে বাংলা‌দেশ ◈ সিঙ্গাপুর বিরু‌দ্ধে ম্যাচের আ‌গে হামজা চৌধুরী‌কে শুভেচ্ছাবার্তা সাকিবের ◈ প্রবাসী ফুটবলার হামজা চৌধুরীর কা‌ছে প্রিয় ক্রিকেটার সা‌কিব আল হাসান ◈ কোচের বিরুদ্ধে থানায় বর্ণবাদের অভিযোগ সিকান্দার রাজার ◈ ‘মৃত’ ছিলেন ৮ মিনিট, ব্রিয়ানার অভিজ্ঞতায় ধরা দিল মৃত্যুর পরের জগত

প্রকাশিত : ০৯ জুন, ২০২৫, ০৮:২৮ রাত
আপডেট : ০৯ জুন, ২০২৫, ১১:১৮ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

এপ্রিলে নির্বাচন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত

মহসিন কবির: জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের রাজনীতি। অন্তবর্তী সরকার বলে সঠিত সময়ে নির্বাচনের তারিখ দেওয়া হয়েছে। কিন্ত এ তরিখে নির্বাচন করতে নারাজ রাজনৈতিকদলগুলো। তবে রাজনৈতিকদলগুলোর মধ্যে আবার মতবেদ আছে। কেউ কেউ বলছে এসময় নির্বাচন হলে তাদের আপত্তি নেই। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে যদি দৃশ্যমান বিচারিক কার্যক্রম দেখা যায়, মৌলিক কার্যক্রম স্পষ্ট হয় এবং বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন কিছু সংস্কার নিশ্চিত করা হয় তাহলে এপ্রিল মাসে নির্বাচন নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। তবে তার আগে এসব সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, আগামী এপ্রিলে নির্বাচন করতে হলে এ বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ দিতে হবে। সেই সঙ্গে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করে ও নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করার মধ্য দিয়ে ভোটের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

তিনি বলেন, ইতোপূর্বে আমাদের নেতা নাহিদ ইসলাম এসব বিষয়ে কথা বলেছেন। দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা একটি অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করছি।

আগামী ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্ধারিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো জটিলতা সৃষ্টি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সেক্রেটারি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ কামাল খান। সোমবার (৯ জুন) নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা লিখেছেন।

তিনি আরও লিখেছেন যে, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচনের কথা বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেটা হবে চৈত্র মাসের শেষ দিকে। ঈদুল ফিতর হবে ১৯ বা ২০ মার্চ। এসএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ মে মাসে। কাজেই নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে খুব সমস্যা হবার কথা নয়। তবে সময়ের চেয়ে নির্বাচনের মান ও গ্রহণযোগ্যতাকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান এ সাবেক সাংবাদিক ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা।

তার ভাষায়, তারিখের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারা। সেটার ওপর জোর দেয়া উচিত।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক ঘোষণায় আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা নির্ধারিত হওয়ার পর থেকেই বিতর্ক চলছে রাজনৈতিক অঙ্গন।

বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যেখানে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছিল, সেই দাবিকে একপ্রকার উড়িয়ে দিয়ে ২০২৬ সালের এপ্রিলে ভোট আয়োজনের ঘোষণা অনেকের কাছেই এসেছে ‘অপ্রত্যাশিত ধাক্কা’ হিসেবে।

বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো কেন এ ঘোষণাকে ভালোভাবে নিচ্ছে না? কেনই বা তাদের এত জোর, নির্বাচন ডিসেম্বরেই হওয়া দরকার? সাধারণ মানুষের মাঝে এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই তিন মাস শুধু সময়ের ব্যবধান নয়। এর পেছনে আছে গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, পারস্পরিক অবিশ্বাস, এবং সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রের শঙ্কা—এই সময়টা ব্যবহার করে হয়তো কিছু ‘পেছনের খেলা’ হতে পারে। আবারও একটি ‘স্ক্রিপ্টেড নির্বাচন’ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন সময়সূচি ঘোষণার পরপরই বিএনপি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। দলটির দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল সব রাজনৈতিক দলকে এক টেবিলে বসিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সময় নির্ধারণ করা। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ঠিক তার উল্টোটা। 

বিএনপির অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেখানে দেশের বড় একটি অংশের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে। এতে করে তার ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। দলটি আরও বলছে, এমন সিদ্ধান্ত জনগণের মনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় তৈরি হতে পারে।

প্রথমত, তারা বলছে, এপ্রিল মাস আবহাওয়ার দিক থেকে অত্যন্ত প্রতিকূল। এ সময় দেশজুড়ে প্রচণ্ড গরম পড়ে, সঙ্গে যোগ হয় কালবৈশাখীর ঝড়। এমন আবহাওয়ায় ভোটারদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়া কষ্টকর হবে, আর নির্বাচনী কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।

দ্বিতীয়ত, এই সময়টিই দেশের পাবলিক পরীক্ষার মৌসুম। মার্চের শেষ ও এপ্রিলের শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা চলতে থাকে। দেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেখানে এই পরীক্ষার সময় নির্বাচন হলে তা শুধু শিক্ষার জন্য নয়, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাও জটিল করে তুলতে পারে।

তৃতীয়ত, রমজান ও ঈদকে ঘিরে এপ্রিলজুড়ে প্রচারণার সময় সংকুচিত হয়ে যাবে। দলটির দাবি, মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানো কার্যত অসম্ভব।

চতুর্থত, এপ্রিল মাসে নির্বাচন আয়োজনের কারণে বাজেট প্রস্তুতিতে সময় সংকট দেখা দিতে পারে। এতে করে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন বাধাগ্রস্ত হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন নয়, সে ব্যাপারে কোনো কথা কিংবা ব্যাখ্যা দেয় না সরকার। কি কি কারণে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না, তাও স্পষ্ট করতে পারেনি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি বিএনপি এই সনদে স্বাক্ষর না করে, তাহলে পুরো প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। সরকার পক্ষ তখন সহজেই পাল্টা যুক্তি দিতে পারে যে ‘বিএনপি আসলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায় না, তারা গঠনমূলক আলোচনার সুযোগ গ্রহণ করছে না’।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের যে তারিখ ঘোষণা করেছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এপ্রিলে আদৌ নির্বাচন হবে কি না, সেটা নিয়েই প্রশ্ন আছে। বরং ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হলে সেটাই দেশের জন্য ভালো হতো। ’

এপ্রিলে নির্বাচনের সময় ঘোষণা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কোনো সুস্পষ্ট কারণ ব্যাখ্যা না করলেও রোববার (৮ জুন) রাতে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। নির্বাচনের সময় পেছানোর কারণ হিসেবে তিনি তিনটি যুক্তি দিয়েছে। ১. সংস্কার, ২. বিচার ও ৩. নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি।

শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন আয়োজনের আগে কিছু মৌলিক সংস্কার দরকার, সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১২ থেকে ১৫টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশনের সুপারিশ একে একে হাতে আসছে এবং সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও সর্বস্তরের অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। এই বিবেচনায় এপ্রিলের প্রথমার্ধকে নির্বাচন আয়োজনের জন্য উপযুক্ত সময় ধরে এগোনো হচ্ছে।

বিএনপির দাবি ও যুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে পরামর্শ করেই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, এপ্রিলের প্রথম দশ দিনে সাধারণত বড় ধরনের তাপপ্রবাহ থাকে না। এছাড়া কালবৈশাখীর সম্ভাবনাও বাড়ে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে, বৈশাখ শুরু হওয়ার পর। তাই আবহাওয়ার দিক থেকেও নির্বাচন আয়োজনের জন্য এপ্রিলের শুরুটা উপযোগী সময়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলে, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকে ৩০টি দল অংশ নিয়েছিল। এরমধ্যে ২৬টি দল কথা বলেছিল। যাদের মধ্যে ২৩টি দলই ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এরপর প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফরে গিয়ে যে কথাটি বলেছেন, ‘শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া আর কেউ ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না’, সেটা সঠিক না। সেখান থেকে অনুমান করা হচ্ছিল যে আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে। নির্বাচন ডিসেম্বরে না হলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি বা কখন দেওয়া যায়। একমাত্র জামায়াতে ইসলামীই এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছে, এনসিপিও কিন্তু বলেনি। সে হিসেবে ধরতে পারি, সরকার জামায়াতে ইসলামীর কথা মেনে নিয়েছে বা নির্বাচনের সময়সীমা তাদের পক্ষে গিয়েছে। ’

জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ঘিরে যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা সামনে আরও ঘনীভূত হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। এপ্রিলে ভোট আয়োজনের ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিভক্তি ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট শুধু সময়ের নয়, এটি বিশ্বাস ও বৈধতার সংকটও বটে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক আলোচনা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং স্বচ্ছ ব্যাখ্যা ছাড়া এই জট খুলবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়