৯ মাস আগে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও যাবতীয় সরঞ্জাম এখনো বুঝিয়ে দেওয়ার কাজ ঝুলে আছে। হস্তান্তরের কাজ গুছিয়ে রেখে অপেক্ষা করছেন ইভিএম প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। এ-সংক্রান্ত চারটি কমিটিও কাজ করেছে। তবু বিগত ইসির সময়ে কেনা প্রায় দেড় লাখ ইভিএমের চূড়ান্ত কোনো নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। এদিকে রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলায় ইভিএমগুলোর বেহাল দশা। অধিকাংশ অকেজো হয়ে যাওয়ার পথে। তবে মেরামতযোগ্য ও সচল ইভিএম সংরক্ষণসংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সভা হলেও কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। সূত্র: বিডি প্রতিদিন
এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ইভিএমে ভোট না নেওয়ার কথা জানিয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচন প্রচলিত ব্যালট পেপার ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে করা হবে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও ইভিএমে ভোট প্রক্রিয়া বাতিলের সুপারিশ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইভিএম হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় কমিটিগুলোর কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য কমিশন সভা বা সমন্বয় সভায় এজেন্ডাভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রকল্পের লোকবল না থাকায় ইসির নিজস্ব জনবল দিয়ে মূল্যবান এসব যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কথা মার্চের মাঝামাঝি তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে বর্তমান ইসি গেল নভেম্বরে যোগ দিয়ে মাত্র চার মাস পার করেছে। এরই মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের জোর প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছে। ইভিএমে ভোট না নিলেও দেড় লাখ ইভিএমের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে প্রকল্প থেকে তা বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
গত ১২ জানুয়ারি নতুন ইসির দ্বিতীয় কমিশন সভায় ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সেদিন সভা শেষে এই নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘বর্তমানে যে মেশিনগুলো আছে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং দায়দায়িত্ব, অপারেশন বুঝে নেওয়ার ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে এটার দায়দায়িত্ব বুঝে নেব এবং রক্ষণাবেক্ষণ করব। ভবিষ্যতে ইভিএমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে, সেটা ব্যবহৃত হবে বা হবে না।’
ইসি সচিবালয়ের অধীনে ইভিএম প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল। পরবর্তীতে ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ এক বছর, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ায় সরকার। প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়ায় ইভিএমে ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য চারটি কমিটি করা হয়েছে। অচল ইভিএম শনাক্ত ও বিনষ্টীকরণ, যাচাইবাছাই করতে একটি কমিটি; একটি গত কমিশনের সময় করা হয়। ওয়্যারহাউসের ভাড়ার হার নির্ধারণ করে সুপারিশ করতে আহ্বায়ক কমিটি। প্রকল্পের যাবতীয় নথি ও মালামাল গ্রহণে কমিটি এবং ইভিএমের সোর্সকোড, ক্রেডিনশিয়াল, কার্ড কাস্টমাইজেশনের যাবতীয় সরঞ্জাম গ্রহণে কমিটি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেড় লাখের মধ্যে ৮৬ হাজারের মতো ইভিএম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) সংরক্ষিত রয়েছে। প্রায় ৬২ হাজার যন্ত্র মাঠ পর্যায়ে রয়েছে। ১ হাজার ২০০-এর মতো ইভিএম নির্বাচন কমিশন ভবনে রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, এর মধ্যে ৪৫-৫০ হাজারের মতো ইভিএম ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সব নির্বাচন উপযোগী ছিল। বাকি ৬০-৭০ হাজার রয়েছে যেগুলো মেরামতযোগ্য। মেরামত করলে ঠিক হয়ে যাবে, বাকিগুলো মেরামতযোগ্য নয়।
ইভিএমের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ইভিএম আমরা আর নির্বাচনে ব্যবহার করছি না। এখন যেসব ইভিএম রয়েছে সেগুলো বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।’ তিনি জানান, ইভিএমের প্রকল্প তো শেষ। প্রতিটি জিনিসেরই একটা স্থায়িত্বকাল রয়েছে। হাজার কোটি টাকার ইভিএমের ভবিষ্যৎ কী হবে এটা সময়ই বলবে। আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের মতে, এসব যন্ত্রপাতি বুঝিয়ে দিতে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে কাজ করতে হবে। এখানে কী কী আছে তার একটা তালিকা হতে হবে। মূল্য নির্ধারণের বিষয় থাকতে সেটা দেখতে হবে।
ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান জানান, বুঝিয়ে দেওয়ার যত কার্যক্রম রয়েছে, সব সম্পন্ন করা হয়ে গেছে। কমিশন যেভাবে চেয়েছে সেভাবে সবকিছু রেডি করে কয়েক দফা কমিটি কাজ করেছে। কিন্তু কোনো কমিটি কাজ সম্পন্ন করেনি।
কমিশনও কাজ শেষ করেছে, মাঠ থেকে রিপোর্ট নিয়েছে, বিএমটিএফ-এ পরিদর্শনে গেছে। সোর্স কোড দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সার্ভারের ক্রেডিনশিয়ালও দিয়েছে, কমিশন নিজেদের মতো চেঞ্জ করে নিয়েছে। ইসি দ্রুত বুঝিয়ে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।