অপূর্ব চৌধুরী, জবি: [২] উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ ছাড়াই চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দুইটি পদই ফাঁকা থাকায় এর প্রভাব পড়েছে সার্বিক কার্যক্রমে৷ যার ফলে বাড়ছে স্থবিরতা। কবে নাগাদ এই দুই পদে নিয়োগ দেওয়া হবে সেটিও অনিশ্চিত। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোন উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হয়নি। তাই সংকট নিরসনে অতি দ্রুত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
[৩] গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক। চিকিৎসাজনিত কারণে গত আগস্ট মাস থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মিত ছিলেন তিনি৷ অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ।
[৪] তবে গত ২৬ নভেম্বর তার মেয়াদও শেষ হয়। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি৷ যার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক সহ সকল কার্যক্রমেই।
[৫] জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১১ এর (১) ধারা অনুযায়ী ভাইস-চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বক্ষণিক প্রধান একাডেমিক ও প্রশাসনিক নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পদাধিকারবলে সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল,অর্থ কমিটি ও পরিকল্পনা-উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান থাকবেন। ১৭ এর (১) ধারা অনুযায়ী ভাইস চ্যান্সেলর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সভাপতি এবং ১৮ এর (২) ধারা অনুযায়ী সিন্ডিকেট সভা ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ,স্থান ও সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। তবে শর্ত থাকে প্রতি দুই মাসে সিন্ডিকেটের কমপক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
[৬] তবে গত জুনের পর আর কোন সিন্ডিকেট সভা আয়োজন হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ অর্থাৎ প্রতি দুই মাসে একটি সভা আয়োজনের কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে কোন সিন্ডিকেট সভা হচ্ছেনা।
[৭] এতে করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, গবেষণার জন্য শিক্ষকদের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি, শিক্ষার্থীদের পুন:ভর্তি, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হচ্ছেনা এমনকি সার্টিফিকেটও তুলতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা৷ পাশাপাশি আটকে আছে বেশ কিছু বিষয়।
[৮] জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০ এর (১) ধারা অনুযায়ী ভাইস চ্যান্সেলর একাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি এবং ২১ এর (১) ধারা অনুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা৷
[৯] জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাত মাস ধরে একাডেমিক কাউন্সিলের কোন সভাও হচ্ছেনা৷ এতে করে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সিলেবাস নবায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সংক্রান্ত সকল বিষয় থমকে আছে৷
[১০] বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সংকট তৈরী হয়েছে তাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছেনা। উচ্চশিক্ষা অর্থাৎ পিএইচডি-এমফিল করার জন্য শিক্ষকরা বিদেশে যেতে পারছেন না৷
[১১] তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষকের পদোন্নতি বোর্ড হয়েছে কিন্তু সিন্ডিকেট সভা না হওয়ায় তাদের উচ্চতর পদে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এতে করে সংকট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। এসব সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হলো দ্রুত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া।
[১২] জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১২ এর (৪) ধারা অনুযায়ী ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের সার্বিক তত্ত্বাবধান করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ সংক্রান্ত নীতি সম্পর্কে ভাইস চ্যান্সেলর, সংশ্লিষ্ট কমিটি, ইনস্টিটিউট ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে পরামর্শ প্রদান করবেন। কোষাধ্যক্ষ সকল প্রকল্পের আর্থিক অনুমোদন দেন।
[১৩] তবে বর্তমানে কোষাধ্যক্ষ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক বিষয়াদিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
[১৪] জানা যায়, গত জুনে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪তম সিন্ডিকেট সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস করা হয়। তবে উপাচার্যের অসুস্থতাজনিত কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের কোন উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হয়নি। নতুন ক্যাম্পাসের বালু ভরাটের টেন্ডার হলেও উপাচার্যের অনুমোদন না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে আছে সংশ্লিষ্ট কাজ।
[১৫] বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, কোষাধ্যক্ষ না থাকায় টেন্ডার কমিটির সমন্বয়ের কোন মিটিং আয়োজন সম্ভব হচ্ছেনা৷ পাশাপাশি কোন প্রকল্পের আর্থিক অনুমোদনও আপাতত হচ্ছেনা। উপাচার্যের অনুমোদন ছাড়া কাজ শুরুর সুযোগ না থাকায় তৈরী হয়েছে জটিলতা। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা বিদ্যমান থাকায় প্রকৌশল দপ্তরেও নেমে এসেছে স্থবিরতা।
[১৬] বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, উপাচার্য না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট সভা ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয়না। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক গতি নষ্ট হচ্ছে। সবার আগে প্রয়োজন উপাচার্য নিয়োগ।
[১৭] গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিকভাবে চলার জন্য উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ দুইটা পদই গুরুত্বপূর্ণ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন দুটি পদই ফাঁকা। এতে করে বেশ কিছু সংকট তৈরী হয়েছে৷ আমরা আশা করব সরকার অতি দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ে-কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে সংকট নিরসনের দৃষ্টান্ত রাখবেন।
[১৮] নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার বলেন, আমরা ফাইল অনুমোদনের জন্য ভিসি-ট্রেজারার স্যারের কাছে পাঠাই৷ এখনো দুই দপ্তরে ফাইল পাঠানো হচ্ছে৷ তবে যেহেতু পদ দুটি ফাঁকা তাই এসব ফাইল অনুমোদনের এক্ষেত্রে জটিলতা তৈরীর পাশাপাশি লম্বা সময় লেগে যাবে।
[১৯] বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, কিন্তু উপাচার্যের অনুমোদন না হওয়ায় অনেক ফাইল জমে আছে৷ কোষাধ্যক্ষ না থাকায় আর্থিক অনুমোদনও বন্ধ এখন।
প্রতিনিধি/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :