জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায়। তবে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্তও ভোট গণনা শেষ না হওয়ায় ফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬৭-৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। ভিপি পদে ৯ জন ও জিএস পদে ৮ জন প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী ছিলেন না। একক প্রার্থী ছিলেন ৬৭টি পদে, ফলে মাত্র ২৪টি পদে ভোট গ্রহণ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে এর মধ্যে দুটি হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোট গণনায় বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘প্রথমে ওএমআর মেশিনে ভোট গণনার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু প্রার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই সময় বেশি লাগছে।’
ভোট গণনা ও ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোট গণনায় বিলম্বের বেশ কিছু কারণ জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম রাশিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যেসব কারণে ভোট গণনায় দেরি হয়েছিল, সেগুলো আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আমরা আশা করছি যে এই প্রস্তুতি নেওয়ার ফলে এবং আজ যে লোকবল আছে, তাতে আমরা হয়তো বিকেল নাগাদ হলের ভোট গণনার হিসাব শেষ করতে পারব এবং রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আমরা সম্পূর্ণ গণনা সম্পন্ন করে বেসরকারিভাবে ফল প্রকাশ করতে পারব।’ এর আগে গতকাল রাতে তিনি জানিয়েছিলেন, শুক্রবার দুপুরের মধ্যে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ভোট শুরুর কথা থাকলেও দুটি হলে কিছুটা দেরি হয়েছিল। আবার কয়েকটি হলে মাঝপথে ভোট বন্ধ ছিল। বিশেষ করে দুটি বড় হলে দুপুর পর্যন্ত ভোটগ্রহণ খুব ধীরগতিতে হয়। পরে শেষ সময়ে ভোটারদের ভিড় বাড়লে ভোট শেষ করতে দেরি হয় এবং ব্যালট বাক্স নির্বাচন কমিশনে পৌঁছাতে রাত সাড়ে ৯টা বেজে যায়। সব ব্যালট বাক্স আসার পর রাত ১০টা থেকে গণনা শুরু হয়।
রাশিদুল আলম বলেন, ‘ম্যানুয়াল গণনায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকায় শুরুতে ধীরগতিতে কাজ হয়েছে। পরে গতি বাড়ানো হয়েছে। প্রথমে পাঁচটি টেবিলে ভোট গণনা শুরু হয়, পরে সেটি বাড়িয়ে ১০টি করা হয়েছে। প্রতিটি টেবিল সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রাখা হয়েছে। তবে কিছু হলে পোলিং এজেন্ট উপস্থিত না থাকায় গণনায় দেরি হয়েছে।’
ভোটের ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বলেন, ‘প্রতিটি হলের ভোট গণনায় প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগছে। এরপর জাকসুর ২৫টি পদের ভোট গণনা আরও বেশি সময়সাপেক্ষ হবে। যে প্যানেলগুলো এখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছে, তাদের সম্মতিতে ওএমআর পদ্ধতিতে গণনা করা উচিত।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবীবা বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা থেকে রেজাল্টের অপেক্ষায় আছি। কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কখন ফল প্রকাশ হবে। এভাবে দেরির কারণে জাকসু নির্বাচনের আনন্দটাই ম্লান হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনকে দ্রুত ফল প্রকাশের ব্যবস্থা নিতে হবে।’