শহীদুল ইসলাম: দেশের গার্মেন্টস সেক্টরে কর্মরত ৪০ লাখ শ্রমিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো আসছে। দীর্ঘ ৫ বছর পরে শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পরপর মজুরি বোর্ড গঠনের মাধ্যেমে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ি মজুরী বোর্ড গঠনের জন্য গত ২৬ জানুয়ারি শ্রমিক ও কারখানা মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের নামের তালিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। পোশাক শিল্প মালিকদের দুই দুই সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের বিষয়ে তাদের প্রতিনিধির নামের তালিকা চেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে বিকেএমইএ'র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা সরকারের তরফ থেকে চিঠি পেয়েছি। ধারণা করছি, সহসাই নতুন মজুরি বোর্ড গঠন হবে।
এদিকে বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগঠনগুলো। সংগঠনগুলো নতুন মজুরি বোর্ড গঠন ও পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থাসহ কয়েক দফা দাবি জানিয়েছে। তারা বিক্ষোভ সমাবেশ শ্রম মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এসব সমাবেশ থেকে বক্তারা বলেন, ২০১৮ সালে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। গত পাঁচ বছরে দেশে তেল, গ্যাস, পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে মন্ত্রী-এমপিরা দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। বিদেশে গাড়ি-বাড়ি করছে। অথচ দেশের ৮০ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে অবদান রাখা ৪০ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং মূল্যস্ফীতির কারণে অনাহারে, অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে। বক্তারা বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বাড়লে শুধু শ্রমিকদেরই লাভ হবে না, কারখানা মালিকের আয় থেকে শুরু করে বৈদেশিক আয়ও বাড়বে। এতে দেশেরই লাভ হবে।
মালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে শ্রমিকদের জন্য সংগঠনগুলোর দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা নূন্যতম মজুরি ঘোষণা; নতুন মজুরি ঘোষণার আগে ৬০ শতাংশ মহার্ঘভাতা চালু; চাল, ডাল, তেল ও শিশু খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি রেশন কার্ডের মাধ্যমে বিতরণের লক্ষ্যে স্থায়ীভাবে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা; সব শ্রমিক এলাকায় শ্রমিকদের জন্য চিকিৎসা-শিক্ষা নিশ্চিতে সরকার ও মালিকদের উদ্যোগ গ্রহণ; বাধ্যতামূলক অংশীদারত্বমূলক প্রভিডেন্ট ফান্ড চালু করন; প্রতি বছর মূল মজুরির ১০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি; শ্রমিক ও শিল্প স্বার্থে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করণে; সোয়েটার ও পিছ রেটে কর্মরত শ্রমিকদের কাজের আগে মজুরি নির্ধারণ ও ঢাল সিজনে পূর্ণ বেসিক প্রদান; দাম বাড়ার এই দুঃসময়ে শ্রমিক ছাঁটাই না করণ; পূর্বে ছাঁটাইকৃত বেকার শ্রমিকদের জীবিকা ভাতা প্রদান।
বিষয়টি নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এর চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ক্রমাগত পণ্যমূল্য বাড়ছে এবং গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এর ফলে শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের নতুন মজুটি বোর্ড গঠনের উদ্যোগকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। তবে এ ক্ষেত্রে বোর্ডে শ্রমিকদের পক্ষে যথাযথ প্রতিনিধি থাকা উচিত।
অন্যদিকে পোশাক কারখানার মালিকরা বলছেন, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ার পর রপ্তানি বাজারে তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমতির দিকে। এ অবস্থায় নতুন মজুরি তাদের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। এর আগে পোশাক খাতে ২০১৩ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হযয়েছিল, যা ২০১০ সালে ৩ হাজার ০০০ টাকা ছিল, ২০০৬ সালে এটি ছিল ১৬৬২ দশমিক ৫০ টাকা, ১৯৯৪ সালে ৯৪০ টাকা এবং ১৯৮৫ সালে ছিল ৬২৭ টাকা। সম্পাদনা: খালিদ আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :