শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কোনোভাবেই মেনে নেব না: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল ◈ ৩ কার্গো এলএনজি আসবে যুক্তরাজ্য থেকে, ব্যয় কত? ◈ ফরিদপুরে আড়িয়াল খাঁ ও পদ্মায় পানি বৃদ্ধি, বন্যা-নদী ভাঙন আতঙ্কে মানুষ ◈ ছাত্রলীগের হামলায় মানসিক ভারসাম্য হারানো ছাত্রদল নেতার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান ◈ এনবিআরের ১৭ কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব চাইলো দুদক ◈ ‘গণঅভ্যুত্থানের পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে বাংলাদেশ’ ◈ এনসিপি থেকে বহিষ্কারের পর মাহিনের বিস্ফোরক মন্তব্য ◈ ঢাকা চাঁদার বাজার কারওয়ান বাজার, প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে! ◈ জুলাই সনদ সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য পেলে খারাপ নজির তৈরি হবে: সালাহউদ্দিন আহমেদ ◈ মোবাইল থেকেই যেভাবে করবেন টাইফয়েড টিকার রেজিস্ট্রেশন

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:৩৫ বিকাল
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০২৫, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘গণঅভ্যুত্থানের পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে বাংলাদেশ’

গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন কাজটি প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। বিভিন্ন কমিশনের প্রতিবেদন থেকে অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ পেলে মানুষ পূর্ববর্তী শাসনামলে অর্থনীতির যে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে তার গভীরতা সম্পর্কে জানতে পেরেছিল।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) নিজের অফিশিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক থেকে এক পোস্টে এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, বাণিজ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকা ঘাটতি, গুরুতর আর্থিক অনিয়মের ফলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এবং গভীরভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থা, যা প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছিল- এসব বিষয়কে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসাবে চিহ্নিত করে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অর্থনীতির পতন রোধ করতে এবং অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনতে আমাদের কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি কঠোর করা হয়েছিল, কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন অর্থাৎ মিতব্যয়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, অর্থনীতির সংস্কার ও পুনরুদ্ধার কর্মসূচির অধীনে যে সাহসী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তার মধ্যে ছিল সম্পদের মান সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য কাঠামোগত সংস্কারের গাইডলাইন প্রস্তুত, আর্থিক ব্যবস্থা থেকে চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করা এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত তারল্য নিশ্চিত করা। আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে সরকার রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির জন্য সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন- বিশেষ কর সুবিধাগুলো পর্যায়ক্রমে বাতিল করা এবং কর প্রশাসন থেকে কর নীতি প্রণয়ন বিভাগকে আলাদা করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, নীতিগত সুদহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যা বিনিময় হারকে স্থিতিশীল করতে সহায়তা করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আজ এক বছর পর পেছনে ফিরে তাকিয়ে, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অনন্য সাফল্য, কীভাবে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি এবং আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কাজটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি সে গল্পটি সবাইকে জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোতেও এই সাফল্য এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বে যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, প্রায় প্রতিটি দেশেই উৎপাদন হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। এটি সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনি ইন্দোনেশিয়ায় সোহার্তো শাসনের পতনের পর, আশির দশকের গোড়ার দিকে ইরানে এবং নব্বইয়ের গোড়ার দিকে রাশিয়ায়ও একই ঘটনা ঘটে। ইন্দোনেশিয়ায়, এক বছরের মধ্যে দারিদ্র্যের হার প্রায় ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৩ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছিল।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থার পতনের এক বছর পর ২০২৩ সালে প্রায় ২৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার মধ্যে ছিল। রাশিয়ায় ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় এবং এর থেকে পুনরুদ্ধারে দেশটির প্রায় ১০ বছর সময় লাগে। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে দেশটিতে পুরুষের গড় আয়ু ছয় বছর কমে গিয়েছিল। একই সময়ে তৎকালীন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর গড় আয়ুও উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এটি ঘটেনি, এখানে মূল্যস্ফীতি কমেছে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া বিভিন্ন নীতির ফলে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এসেছে, যে কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জুলাই মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসইএক্স-DSEX) এর মূল্যসূচক ১২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্ববাজারের প্রধান পারফর্মারদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে ছিল; ভিয়েতনামের ভিএস৩০ (VN30) (+১৩.৯৩ শতাংশ) এবং থাইল্যান্ডের SET (+১২.৫৪ শতাংশ) এর পরেই ছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অবস্থান। এ সূচক ৬০৫ পয়েন্ট বেড়ে ৫,৪৪৩ এ পৌঁছেছে, যা সাড়ে নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া সঠিক নীতিমালা বাংলাদেশের অর্থনীতির রক্তক্ষরণ বন্ধ করেছে এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রণোদনা এবং আস্থা ফিরে পাওয়ার কারণে, প্রবাসীরা যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের ফলে আর্থিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাও ফিরে এসেছে। বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা চালু হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তবে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, বিশেষ করে আর্থিক খাতে। আর্থিক খাতে ঝুঁকি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নামিয়ে আনতে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে কাজ করার পাশাপাশি একইসঙ্গে কিছু কঠিন বিষয়েও আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের ব্যয় এড়াতে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধি করতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে নতুন উদ্ভাবনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতেও আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা অব্যাহত রাখছি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বর্তমানে সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা এক বছর আগে অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল। আগামী দিনগুলোতে অর্থনীতির অবস্থা আরও উন্নতির দিকে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও মূল্যস্ফীতির হার এখন কমে এসেছে, তবে আমরা এটিকে সাত শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে আমাদের নীতিগুলো অব্যাহত রাখব।

তিনি বলেন, দৃঢ় মূলনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি সুসংহত আর্থিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বিনিময় হার এবং পুঁজিবাজারে যথাযথ নীতির বাস্তবায়নের ওপর ভিত্তি করে আমরা ভবিষ্যতে অবস্থার আরও উন্নতি ঘটবে বলে আশা করি। আমরা আশা করি, প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে, মূল্যস্ফীতি আরও হ্রাস পাবে, পাশাপাশি শেয়ার বাজারও ঊর্ধ্বমুখী হবে।

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করে বলেন, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরীর লেখা এই আর্টিকেলটি গতকাল সোমবার ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত হয়েছে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়