শিরোনাম
◈ উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, খুলে দেওয়া হলো ৪৪ স্লুইসগেট ◈ অপকর্ম আড়াল করতে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি ধর্মভিত্তিক দল: রিজভী (ভিডিও) ◈ প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান, যান চলাচল বন্ধ ◈ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় ‘গ্র্যাজুয়েট প্লাস’ ভিসা পাবেন, যে সুবিধা পাবেন ◈ নীতিগত ঘাটতিতে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ, হালাল পণ্যে অদেখা ট্রিলিয়ন ডলারের সম্ভাবনা! ◈ 'দেশকে বিক্রি করে কিছু কইরেন না', উদ্যোক্তাদের জন্য আশিক চৌধুরীর তিন পরামর্শ (ভিডিও) ◈ তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার থেকে সরে ‍যাবেন আসিফ মাহমুদ (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল, তবে উদ্বেগ রয়ে গেছে: মার্কিন প্রতিবেদন ◈ ভয়ে পালাচ্ছে বাঙালি শ্রমিকরা: দিল্লি, নয়ডা, গুরুগ্রামে গৃহকর্মী সংকটে ভুগছে শতাধিক পরিবার ◈ কা‌কে ভোট দে‌বেন, সিদ্ধান্তহীনতায় ৪৮ শতাংশ মানুষ, দায় সরকার ও রাজনৈতিক দলের: বিআইজিডির জ‌রিপ

প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৩৬ দুপুর
আপডেট : ১৩ আগস্ট, ২০২৫, ০২:০১ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

পতনের ধারায় শেয়ারবাজার, আসছে না ভালো কোম্পানি

মহসিন কবির: শেয়ারবাজারে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসের প্রথম তিন ঘণ্টায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়লেও শেষ ঘণ্টায় মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপের কারণে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। এর ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) উভয় বাজারের সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা ছয় কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে দরপতনের ধারা অব্যহত রয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকতে থাকা শেয়ারবাজারে ফের আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। ফলে ভালো শেয়ারের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। চাহিদা বৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে নতুন শেয়ারের জোগান বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারে ভালো মৌলভিত্তি কোম্পানির বড় অভাব রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি স্বীকার করলেও দীর্ঘ সময়ে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি। দুঃখজনক হলেও সত্য, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের বেশ ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে ২০ থেকে ২৫টির বেশি ভালো কোম্পানির নাম বলা যায় না। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি বাড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময়।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনপরবর্তী সময়ে শেয়ারবাজার অন্ধকার গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসবে- এমন প্রত্যাশা তৈরি হয়। অর্থনীতিতে সংস্কারের ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যাংক। পুঁজিবাজারে প্রাণ ফেরাতে নতুন ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তি হবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা দীর্ঘ সময় ধরে রয়ে গেছে পূর্ণতার ঊর্ধ্বে। একটানা ১৩ মাসে একটি নতুন কোম্পানিও তালিকাভুক্ত হয়নি, যা দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে নজিরবিহীন শূন্যতা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, করপোরেট বন্ড, ট্রেজারি বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড বাদে বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৬৮টি। এর মধ্যে সর্বশেষ আইপিও এসেছিল ২০২৪ সালের জুনে, টেকনো ড্রাগস কোম্পানির। এর পর ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত আর কোনো নতুন কোম্পানি বাজারে আসেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত ১৫ বছরে ১৩৪ প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি অনুমোদন করেছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো ভালো ফল বয়ে আনতে পারেনি। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই তালিকাভুক্ত হওয়ার পর মুনাফা করার সক্ষমতা কমেছে। ফলে তাদের জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অংশীজনরা বলছেন, মানসম্পন্ন শেয়ারের সংকটের মতো একটি সমস্যা রয়েই গেছে। বিএসইসি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), মার্জিন ঋণ এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ড-সংক্রান্ত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিধিবিধান সংস্কারে ধীরগতিতে কাজ করছে। এই পরিবর্তনগুলোকে নতুন তালিকাভুক্তির জন্য জরুরি বলে মনে করা হয়।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, কয়েকটি কোম্পানি দিয়ে শেয়ারবাজার ভালো করা সম্ভব নয়। ভালো কোম্পানি বাজারে না আসা পর্যন্ত শেয়ারবাজার ভালো হবে না। ইতোমধ্যে ভালো কোম্পানি চিহ্নিত করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব কোম্পানি তালিকাভুক্তির পরামর্শ দেন তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, আমাদের শেয়ারবাজারের গভীরতা অনেক কম। ভালো ভালো কোম্পানি এই বাজারে আসতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। এসব কোম্পানির মালিকরা ভাবেন, ছেলে হবে পরিচালক, বউ চেয়ারম্যান। ব্যবসায় যা মুনাফা হবে, তা নিজেরা ভোগ করবেন। শেয়ারবাজারে আসা মানেই ভালো ব্যবস্থাপনা, করপোরেট সুশাসন ইত্যাদি উন্নত হওয়া। কিন্তু অনেকে এসব বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চান না। তাই তারা বাজারে আসতে আগ্রহী নন। কিন্তু সময় এসেছে বাজারের গভীরতা বাড়ানোর। এ জন্য ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। তার জন্য করের সুবিধাসহ সরকারি যেসব নীতি-সহায়তা দরকার, সেসব বিষয় সরকার বিবেচনা করবে। কিছু সরকারি কোম্পানি বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি এবং আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাজেদা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেছেন, পুঁজিবাজারের ব্যাপ্তি বাড়াতে ভালো কোম্পানি আনা খুবই প্রয়োজন। এ জন্য মার্চেন্ট ব্যাংক এবং আইসিবিও কাজ করছে। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্তির যোগ্য কোম্পানিকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি।

ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং ধরে রাখার জন্য ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের এ সময় তালিকাভুক্তির জন্য উপযুক্ত সময়। এজন্য আগামী ৬ মাসে এ বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে।

সরকারের উদ্যোগ: দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশি পরামর্শক দিয়ে পুঁজিবাজার সংস্কার করাসহ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস পাঁচ নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে রয়েছে বহুজাতিক এবং বেসরকারি খাতের বড় এবং ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা। পরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক এবং অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ভালো শেয়ার চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আইপিও রুলস সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র মো. আবুল কালাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। আইপিও রুলস সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।

কিছু সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ: সরকারি যেসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে, এর মধ্যে রয়েছে- নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস সিস্টেম, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি, সোনারগাঁও হোটেল, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, লিকুফায়েড পেট্রোলিয়ম গ্যাস, সিলেট গ্যাসফিল্ড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, চিটাগাং ডকইয়ার্ড, কর্ণফুলী পেপার মিলস, বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, টেলিটক ও টেলিফোন শিল্প সংস্থা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়