ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের তৈরি পোশাক খাতের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল তুলা ও সুতা। তুলার জন্য বাংলাদেশের বরাবরই বিদেশনির্ভরতা থাকলেও স্পিনিং মিলগুলোর কল্যাণে স্থানীয় উৎপাদকরাই সুতার চাহিদার বড় অংশ সরবরাহ করছেন। তবে উৎপাদন খরচ বাড়ার পাশাপাশি গ্যাস সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি বেড়েছে। পাশাপাশি দেশটি থেকে তুলা আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, এ বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে ১০৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের তুলা রফতানি করা হয়েছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭২ কোটি ৭১ লাখ ডলার। এ সময়ে বাংলাদেশে ভারতের তুলা রফতানি বেড়েছে ৪৯ দশমিক ২০ শতাংশ। একইভাবে ম্যান মেড স্ট্যাপল ফাইবার রফতানি বেড়েছে ২৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল-আগস্ট সময়ে ভারত ৬ কোটি ২৪ লাখ ডলারের ম্যান মেড স্ট্যাপল ফাইবার রফতানি করেছে, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। এছাড়া এ সময় ভারত থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল হিসেবে ট্যানিং বা ডায়িং এক্সট্রাক্টসের রফতানিও বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এ বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে দেশে ২৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক খাত সম্পর্কিত পণ্য আমদানি হয়েছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৫০ কোটি ৪২ লাখ ডলার। এর মধ্যে তুলায় ৬৪ কোটি ডলার, সুতায় ৫৫ কোটি, টেক্সটাইল পণ্যে ১২ কোটি ৬৮ লাখ, স্ট্যাপল ফাইবারে ২২ কোটি ৪৩ লাখ এবং ডায়িং ও ট্যানিং পণ্য আমদানিতে ১৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতিটি ক্যাটাগরির পণ্যেই আমদানি বেড়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) প্রেসিডেন্ট ও ইভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রথমত গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের এখানে স্পিনিং মিলের উৎপাদন কমে গেছে। তাছাড়া ভারত বেশ কম দামে সুতা বিক্রি করছে। অন্যদিকে সুদের হার বৃদ্ধি, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমাদের উৎপাদিত সুতার খরচ বেশি পড়ছে। এ কারণে ভারত থেকে আমাদের সুতা আমদানি বাড়ছে।’
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলোর উৎপাদন কমে যাওয়ার পাশাপাশি ভারত থেকে তুলা ও সুতা আমদানির ক্ষেত্রে বেশকিছু সুবিধাও আছে। যেমন ভারত থেকে স্থলবন্দরের মাধ্যমে ট্রাক দিয়ে সহজে পণ্য পরিবহন করা যায়। তাছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যে পরিমাণ কার্যাদেশ দেয়া হয়, সেটি একবারেই আমদানি করতে হয়। কিন্তু নিকট প্রতিবেশী হওয়ায় ভারত থেকে কার্যাদেশ দেয়া পণ্য একবারে না এনে আংশিকভাবেও নিয়ে আসা যায়। এতে আমদানিকারকদের ওপর অর্থের চাপও কমে যায়।
শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত দুই বছর গ্যাস সংকটের কারণে স্থানীয় স্পিনিং মিল ও নিট কম্পোজিট মিলগুলোর উৎপাদন অনেক কমে গেছে। এ কারণে ভারত থেকে সুতা আমদানির পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে।’
মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্যানুসারে, ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশ ১৪১ কোটি ডলারের সুতা আমদানি করেছে। এর মধ্যে ভারত থেকেই এসেছে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ভারতের বৃহৎ টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোর বড় বাজার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। দেশটির লাহোটি ওভারসিজ লিমিটেড, স্কয়ার করপোরেশন, ইন্দোরামার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত সুতার উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশে রফতানি করে।
সুতা উৎপাদকরা বলছেন, গত বছর পর্যন্ত স্থানীয় সুতা ব্যবহার করলে তৈরি পোশাক খাত ৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পেত, যেটি এখন নেই। ভারত তাদের স্থানীয় শিল্পের প্রসারে বড় অংকের প্রণোদনা দিয়েছে। যার কারণে সেখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো সুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভালো সুবিধা পেয়েছে। আমাদের এখানে গত কয়েক বছরে শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে, অন্যদিকে ভারতে মজুরি সে তুলনায় স্থিতিশীল। বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে সুতা উৎপাদনে ব্যয় অনেক বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের স্থানীয় সুতা উৎপাদনকারীরা আগের মতো কম দামে পণ্য উৎপাদন করতে পারছেন না। সে তুলনায় ভারতের সুতার দাম কম পড়ছে। ফলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা ভারত থেকে সুতা আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশ ১৪১ কোটি ডলারের সুতা আমদানি করেছে। এর মধ্যে ভারত থেকেই এসেছে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের স্থানীয় বস্ত্র কারখানাগুলো নিট ফ্যাব্রিকসের ৮৫ শতাংশ ও ওভেন ফ্যাব্রিকসে ৪০ শতাংশ চাহিদা পূরণে সক্ষম। তবে উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সুতার জন্য বাংলাদেশকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। দেশের বস্ত্র কারখানাগুলোর ১ কোটি ৫০ লাখ বেল তুলা ব্যবহারের সক্ষমতা থাকলে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে ৮৫ লাখ বেল।
ভারতের বৃহৎ টেক্সটাইল কোম্পানিগুলোর বড় বাজার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশটির লাহোটি ওভারসিজ লিমিটেড, স্কয়ার করপোরেশন, ইন্দোরামার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত সুতার উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশে রফতানি করে। তাছাড়া সম্ভাবনাময় বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভারতের আরো বেশকিছু কোম্পানি বাংলাদেশে সুতা রফতানির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।
দেশের বস্ত্র খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি স্কয়ার টেক্সটাইলস পিএলসি। কোম্পানিটির ৪৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ মালিকানা রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে। জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গত বছর পর্যন্ত স্থানীয় সুতা ব্যবহার করলে তৈরি পোশাক খাত ৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পেত, যেটি এখন নেই। ভারত তাদের স্থানীয় শিল্পের প্রসারে বড় অংকের প্রণোদনা দিয়েছে। ফলে সেখানকার প্রতিষ্ঠানগুলো সুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভালো সুবিধা পেয়েছে। আমাদের এখানে গত কয়েক বছরে শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। অন্যদিকে ভারতে মজুরি সে তুলনায় স্থিতিশীল। বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে সুতা উৎপাদনে ব্যয় অনেক বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশের স্থানীয় সুতা উৎপাদকরা আগের মতো কম দামে পণ্য উৎপাদন করতে পারছেন না। সে তুলনায় ভারতের সুতার দাম কম পড়ছে। ফলে দেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা ভারত থেকে সুতা আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
সুত্র : বণিক বার্তা
আপনার মতামত লিখুন :