সুজন কৈরী: [২] দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে মাদরাসাছাত্র মো. তাওহীদ ইসলামকে (১০) অপহরণ করার পর দাবি করা মুক্তিপণ নিয়েও হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মকবুল হোসেনকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
[৩] রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
[৪] সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত শনিবার দিবাগত রাতে কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম নিখোঁজ হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায় ওইদিন রাতে বাসায় পড়ে থাকা একটি ফোনে একজন ব্যক্তি মোবাইলে ফোন করে জানায় যে, সে ভুক্তভোগী তাওহীদকে অপহরণ করেছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। ফোনটি অপহরণকারীই রেখে যান। পরে তাওহীদের মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। নিহতের মা তার ছেলেকে উদ্ধারে র্যাবের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
[৫] কমান্ডার মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার রাতে র্যাব-১০ এর একটি দল মাদরাসাছাত্র অপহরণ করে হত্যার পর সেপ্টিক ট্যাংকে মরদেহ গুমের পরও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মকবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় মুক্তিপণের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
[৬] প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় গ্রেপ্তার মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। নিহতের পরিবার ও মকবুল একই এলাকায় বসবাস করতো এবং কিছুদিন আগে ভুক্তভোগীর বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেছে। একই এলাকায় বসবাস এবং বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাদে নিহতের পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। নিহত তাওহীদের বাবা একজন প্রবাসী। তাওহীদ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার একটি মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশোনা করতো। যার ফলে সে সকালে মাদরাসার উদ্দেশ্যে বাসা হতে বের হতো এবং বাসায় ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যেতো।
[৭] কমান্ডার মঈন আরও বলেন, মকবুলের ধারণা ছিল, নিহতের বাবা প্রবাসী তাই ছেলেকে অপহরণ করলে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে। এরই প্রেক্ষিতে মকবুল অল্পসময়ে বেশি অর্থ লাভের আশায় প্রায় ছয় মাস অপহরণের পরিকল্পনা করছিল। তাওহীদ মাদরাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির রাস্তার পাশে ওঁৎ পেতে থাকে মকবুল। এ সময় মাদরাসা থেকে আনুমানিক রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা মকবুল তাওহীদের মুখ চেপে ধরে এলাকার নিকটস্থ একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে কলাগাছের সঙ্গে তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে রাখে। পরে মকবুল আগে থেকে কিনে রাখা মোবাইল কৌশলে তাওহীদের বাসা ফেলে রাখে। মকবুল বাসায় রেখে আসা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অপহরণের বিষয়টি জানিয়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ সময় মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে তাওহীদকে হত্যা করার হুমকি দেয়। কলা গাছে বেঁধে রাখা অবস্থায় মুখের বাঁধন খুলে যায়। এই সময় মকবুলকে চিনে ফেলে ও ডাক-চিৎকার করলে গ্রেফতার মকবুল ক্ষিপ্ত হয়ে তাওহীদের মুখ ও গলা মাফলার দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ওই এলাকার ট্যাংকের ভেতরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
[৮] র্যাব জানায়, হত্যার পরও মুক্তিপণের টাকা চায়। নিহত তাওহীদের মামাকে ঘাতক মকবুলের কথামতো ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের ওপরে ৪নং পিলারের গোড়ায় ৩ লাখ টাকা রেখে আসে। গ্রেপ্তার মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। হোটেলে অবস্থাকালীন র্যাব গ্রেপ্তার করে।
[৯] এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে মকবুলের আগের কোনো অপরাধের তথ্য পায়নি র্যাব। তবে এই ধরনের ইউনিক অপরাধের ধরণ দেখে আমরা ধারণা করছি তার আগের অপরাধের ইতিহাস থাকতে পারে। এটা মামলার বিস্তারিত তদন্তে উঠে আসবে। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী
এসকে/এসসি/এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :