শিরোনাম
◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি: ড. ইউনূসের আইনজীবী

প্রকাশিত : ২০ মার্চ, ২০২৩, ০২:৪৮ দুপুর
আপডেট : ২০ মার্চ, ২০২৩, ০২:৪৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৬ মাসে ৫০ জন অপহরণ

ধরা ছোঁয়ার বাইরে পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণকারী চক্র

জিয়াবুল হক, টেকনাফ: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় একের পর এক অপহরণের ঘটনা ঘটলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে পাহাড় কেন্দ্রিক অপহরণকারী মূল চক্রটি। গেল ছয় মাসে টেকনাফ উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় অন্তত ৫০ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন।

সর্বশেষ রোববার (১৯ মার্চ) সকালে এক কৃষককে অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তরা মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই কৃষকের নাম মোহাম্মদ ছৈয়দ। তিনি হ্নীলা ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সকাল ১০টায় টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, সকালে জুম্মাপাড়ায় নিজের ক্ষেতে কাজ করতে যান কৃষক মোহাম্মদ ছৈয়দ। একপর্যায়ে মুখোশ পরা একদল অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্ত তাকে তুলে নিয়ে যায়।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তিপণের দাবিতে কৃষক মোহাম্মদ ছৈয়দকে অপহরণ করা হয়েছে। এর আগেও জুম্মাপাড়ার আশপাশের এলাকায় মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ৭ জন অপহৃত হওয়ার পরদিন শুক্রবার রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতরা জানান, অপহরণকারীদের হাতে রয়েছে ভারী অস্ত্র; আর মুক্তিপণের জন্য করা হয় নির্যাতন।

শনিবার (১৮ মার্চ) অপহরণের ঘটনায় স্থানীয় এক চৌকিদার ও তার সহযোগীকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা পাহাড়ি এলাকা থেকে ৯ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর মোহাম্মদ আমির (১১) ও রিফাত উল্লাহ (১২) নামের ২ জনকে ছেড়ে দিলেও জিম্মি রাখা হয়েছিল ৭ জন।

১৭ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করা হয় ৭ জনকে। তারা হলেন জাহাজপুরা গ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন (১৭), ফজল করিম (৩৮), জাবেরুল ইসলাম (৩৫), আরিফ উল্লাহ (২২), মোহাম্মদ রশিদ (২৮), মোহাম্মদ জাফর (৩৮), মোহাম্মদ জায়নুল ইসলাম (৪৫)।

এ ঘটনায় অপহরণকারী চক্রের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন স্থানীয় চৌকিদার মোহাম্মদ ইছাক, মো. সেলিম, আইয়ুব, মুসা, কালু ও নুরুল। যার মধ্যে স্থানীয় চৌকিদার মোহাম্মদ ইছাক ও তার সহযোগী মো. সেলিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আবদুল হালিম জানান, উদ্ধারের পর পাওয়া তথ্যমতে অপহৃতরা বাহারছড়া পাহাড়ি এলাকায় পানের বরজে পানির ব্যবস্থা করতে গেলে ৬ থেকে ৮ জন লোক এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়। যারা ১৭ মার্চ সকাল ১০টা পর্যন্ত আটক ছিল।

এরপর তারা সবাই মিলে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ৮ ঘণ্টা ধরে ৭ জন পাহাড়ে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকে। পুলিশ তাদের কৌশলে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া গিয়াস উদ্দিন, জায়নুল ইসলাম ও আরিফ উল্লাহর কাছে মোবাইল ছিল। 

যে মোবাইলের মাধ্যমে নিজের পরিবারসহ অপর ৪ পরিবারের কাছে দফায় দফায় ফোন করে মুক্তিপণের টাকা দিতে বলে। ৭ জনের ৪ জন নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত এবং প্রহারে শিকার হলেও এ ৩ জন কোনো ধরনের আঘাত বা প্রহারের শিকার হননি। এমনকি তাদের জামাকাপড় সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও সঠিক রয়েছে। এর মধ্যে গিয়াস উদ্দিনের পিতা বাবা চৌকিদার মোহাম্মদ ইছাকও অপহরণকারী চক্রে জড়িত রয়েছে। এই চৌকিদারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

চৌকিদারের জড়িত থাকার বিষয় নিয়ে পুলিশ সুপার জানান, চৌকিদারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন অপহৃত হলেও সে সম্পূর্ণ নীরব ছিল এবং এই সংক্রান্ত কোনো সংবাদ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশকে অবহিত করেনি। চৌকিদার নিজেই অপহৃত অপরাধীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দ্রুত টাকা দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। চৌকিদার তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মোবাইল ফোন থেকে সরাসরি অপহরণ চক্রের আইয়ুব নামের একজনকে সহায়তা করে।

আইয়ুব এ অপহরণের ঘটনায় মুক্তিপণের টাকা বহনকারী। এমনকি আইয়ুব নামের ওই ব্যক্তি চৌকিদারের দ্বিতীয় স্ত্রীর মোবাইল ব্যবহার করে টাকা আদান প্রদানের কাজটি সরাসরি করেন। চৌকিদারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন শুক্রবার সকালে মুক্ত হওয়ার ঘটনাটি জানার পরও গোপন রাখে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে চৌকিদার এ ঘটনা স্বীকারও করেন। তার নেতৃত্বে সাড়ে ৬ লাখ টাকা সংগ্রহ হলে চৌকিদার সন্দেহ দূর করতে নিজেও টাকা দেন।

পুলিশ সুপার এ ঘটনায় চক্রের অপর সদস্য মোহাম্মদ সেলিম নামের অপর এক জনকেও গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ সেলিম অপহৃতদের পরিবারের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে জামা রাখেন বাড়িতে। টাকা পৌঁছানোর ১ ঘণ্টা আগেই পাহাড়ে জিম্মি রাখা ৭ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। উদ্ধারের পর ৭ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয় পুলিশ হেফাজতে।

অপহরণকারী চক্রটি ৮ জনের হলেও তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা। আর উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা জানায়; অপহরণকারীদের হাতে ছিল ভারী অস্ত্র। আর মুক্তিপণের জন্য চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।

উদ্ধার হওয়া ফজল করিম (৩৮) বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়ার অপহরণকারীরা আমাকে বেশি মারধর করেছে। মারধর করে মোবাইলে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেছে। মারতে মারতে আমার হাত ও পা অনেকটা ভেঙে গেছে।

উদ্ধার মোহাম্মদ রশিদ (২৮) বলেন, অপহরণকারীরা মুখোশধারী ছিল। তাদের হাতে অস্ত্র ও কিরিচ ছিল। তারা মুখোশ পরা থাকায় তাদের চেনা যায়নি।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, এ অপহরণের নেপথ্যে আর কে কে জড়িত; তাদের গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বের করার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে এ অপহরণ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড যারা আছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

গত ৬ মাসে টেকনাফের পাহাড়কেন্দ্রিক ৫০ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা হলেও ৩৩ জন স্থানীয় বাসিন্দা। যেখানে ২৯ জন মুক্তিপণের টাকা দিয়ে ফেরত আসার তথ্য জানিয়েছিল। সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ ৭ জন অপহরণের পর সাড়ে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত আসে। পুলিশ সর্বশেষ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতারও করেছে।

এর মধ্যে ২০ জন রোহিঙ্গা হলেও ৩০ জন স্থানীয় বাসিন্দা। যেখানে ২৪ জন মুক্তিপণের টাকা দিয়ে ফেরত আসার তথ্য জানিয়েছিল।

সর্বশেষ গত ৩ মার্চ ২ শিশু অপহরণের ৮ ঘণ্টা পর ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফেরত আসে। এ ছাড়া ২১ জানুয়ারি হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়ক পাহাড়ি ঢালার ভেতর থেকে মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ইজিবাইকচালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

প্রতিনিধি/জেএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়