জুলাই অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তদন্তগুলো খুব সতর্কতার সাথে করছি। আমাদের লক্ষ্য সুষ্ঠু তদন্ত শেষ করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও আহতের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত সম্পন্ন করতে পুলিশ সতর্কতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তদন্তগুলো খুব সতর্কতার সাথে করছি। আমাদের লক্ষ্য সুষ্ঠু তদন্ত শেষ করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে রোববার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশ সদর দফতরের সূত্র জানায়, সারাদেশে মোট ১ হাজার ৭৩০টি মামলা হয়েছে, এগুলোর মধ্যে ৭৩১টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ও আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন কঠোরভাবে দমনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ও দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ দলটির অধিকাংশ শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনেকে এসব মামলায় আসামি।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, পুলিশ তড়িঘড়ি করে তদন্ত করতে চায় না। কারণ এতে অপরাধীদের বিচারের বাইরে চলে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
আইজিপি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের সাথে সম্পর্কিত হত্যা মামলার সংখ্যা অনেক বেশি। তারপরও পুলিশ প্রতিটি মামলার তদন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এজন্য সময় লাগছে।
তবে পুলিশ প্রধান আশাবাদী, আগস্টের মধ্যে বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হবে। পুলিশ সদর দফতর মামলার অগ্রগতি মনিটরিং করছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সদর দফতরের তথ্যমতে, জুলাই অভ্যুত্থান-সংশ্লিষ্ট ১৯টি মামলার অভিযোগপত্র এখন পর্যন্ত আদালতে দাখিল হয়েছে। এর মধ্যে আটটি হত্যা মামলা এবং ১১টি দণ্ডবিধির অন্যান্য ধারায় দায়েরকৃত মামলা।
আটটি হত্যা মামলার মধ্যে শেরপুরে তিনটি, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও কুড়িগ্রামে একটি করে এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি মামলা রয়েছে।
অপর ১১টি মামলার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি করে চার্জশিট দিয়েছে। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ তিনটি, সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ দুইটি, পাবনা ও জামালপুর জেলা পুলিশ একটি করে এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন দুটি চার্জশিট জমা দিয়েছে।
তদন্ত সঠিকভাবে চলছে কি না, জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা তা তত্ত্বাবধান করছেন।
আগের সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা জুলাই অভ্যুত্থান মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
জাতিসঙ্ঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের হিসাবে, আহতের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন পর্যন্ত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত গুরুতর অপরাধ, ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও আগের সরকারের আমলে গুমের ঘটনায় ৪৫০টি অভিযোগ পেয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বাসস’কে জানান, ইতোমধ্যে ৪টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ পর্যায়ের আরো দু’জন আসামি রয়েছে।
দুটি মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে এবং আইসিটি-১-এ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের জবানবন্দী রেকর্ড করা শুরু হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, মোট ৩০টি বিবিধ মামলায় ২০৯ জন ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৪ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই নৃশংসতার নেপথ্যের নায়ক ও সরাসরি জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে প্রসিকিউশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা অতীতের ট্রাইব্যুনালগুলোর প্রমাণের মানদণ্ড অনুসরণ করতে চাই না। আমরা অকাট্য সত্য উপস্থাপন করছি। তদন্তের জন্য কঠোর সময়সীমা নির্ধারণ করা সমীচীন হবে না।
তাজুল ইসলাম জানান, প্রসিকিউশন এখন পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড করেছে এবং অভিযোগ প্রমাণে সহায়ক এক হাজারেরও বেশি ভিডিও ক্লিপসহ ব্যাপক ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছেন।
প্রসিকিউশনের দাবি, তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন।