আল আমিন: জীবন বাঁচাতে ২০১৭ সালে কয়েক লাখ লোক মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে। যাদের মধ্যে আনোয়ার শাহ’র মতো অনেক শিশুও ছিলো। এসব শিশুর অনেকেই এখন পরিপূর্ণ যুবক। বয়স আঠারো বছর হয়ে গেলেও ক্যাম্পে তাদের জীবন গড়ার কোন সুযোগ নেই। বিবিসি বাংলা
গত পাঁচ বছরে আনোয়ার শাহ শুধুমাত্র ঘরের জন্য পানি আর ত্রাণ সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, কাজের মধ্যে আমাদের মাত্র দুইটা কাজ, খাওয়া আর ঘুমানো। এর বাইরে আর কোন কাজ নেই। যেহেতু আমরা ক্যাম্পের বাইরে খুব বেশি দূরে যেতে পারি না, তাই কোন কাজও করতে পারি না।
মায়ানমারে থাকতে আনোয়ার শাহ চেয়েছিলেন কোরআনে হাফেজ হয়ে ধর্মীয় শিক্ষক হবেন। এই স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি ১৫ পারা কোরআনও মুখস্ত করেছেন। কিন্তু রাখাইনে তাদের ওপর নির্যাতন শুরু হওয়ায় পড়ালেখা বাদ দিয়ে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে আসতে হয় তাকে। ফলে তার আর কোরআন হাফেজ হওেয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও খুব বেশি পড়ালেখার সুযোগ নেই। দিন মজুর হিসেবে কিছু আয় করার সুযোগ থাকলেও বড় কোন চাকরি বা ব্যবসা করার অনুমতি নেই তাদের।
আর যেহেতু পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি, তাই জীবন নিয়ে খুব বেশি স্বপ্নও দেখেন তা তিনি। সদ্য কৈশোর পা দেওয়া আনোয়ার শাহ যৌবনে পা দিয়েই বিয়ে করে ফেলতে চান। কিন্তু বাংলাদেশি আইনে ২২ বছর বয়সের আগে ছেলেরা বিয়ে করতে পারে না, তাই বাধ্য হয়ে তাকে আরও ৪ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তার ভাষায়, মায়ানমারে আমাদের লোকেরা ১৮, ১৯ বা ২০ বছর বয়সেই সংসার শুরু করেন। কিন্তু এখানে নাকি ২২ বছরের আগে বিয়ে করা যায় না, সিআইসি (ক্যাম্প ইনচার্জ) জানিয়েছে, আমাদের এই নিয়ম মানতে হবে। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও এখন অনেকটা হতাশায় পেয়ে বসেছে আনোয়ার শাহকে। আর হতাশা নিয়েই বলেন, হয় আমাদের নিজেদের দেশে ভালোভাবে ফিরিয়ে নেওয়া হোক, না হয় এই দেশে সুন্দরভাবে চলতে পারার মতো সুযোগ সুবিধা করে দেওয়া হোক। সম্পাদনা: মাজহারুল ইসলাম