আজিজুল হক, বেনাপোল (যশোর): দেশে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে দুটি চালানে মোট ৬০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে পেঁয়াজবোঝাই দুটি ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর সরকার ভারত থেকে প্রতিদিন ৫০টি আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) এর বিপরীতে দেড় হাজার টন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে এবার প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, পেঁয়াজের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার এস কে এ এন্টারপ্রাইজ ও সাবাহা এন্টারপ্রাইজ। ভারতের জাইবা এন্টারপ্রাইজ ও এমডি এন্টারপ্রাইজ এসব পেঁয়াজ রফতানি করেছে। প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ৩০৫ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি করা হয়েছে। দ্রুত খালাসের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার নাথ বলেন, প্রথম চালানে ৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে। মান পরীক্ষার পর দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বেনাপোলসহ আশপাশের বাজারগুলোতে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
স্থানীয় ক্রেতা আজিবার রহমান বলেন, শনিবার বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিতে ১১০ টাকা। আমদানির খবর শুনেই একদিনের ব্যবধানে দাম কমেছে ১০ টাকা। এতে প্রমাণ হয়, কিছু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে রেখেছিল।
আমদানিকারকের প্রতিনিধি ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জানান, আমদানিকৃত পেঁয়াজের ঘোষিত মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ৩০৫ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৭ হাজার ৪২৯ টাকা। আমদানি বাড়লে বাজার আরও স্থিতিশীল হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৭ থেকে ২৮ লাখ মেট্রিক টন। ২০২৪ সালে দেশে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন, যা গত দুই বছরে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেখা দেওয়ায় সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, দেশীয় কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার আগে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল। পরে ভারতও রফতানি বন্ধ করে দেয়। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন ও মজুত থাকা সত্ত্বেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। শেষ পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানির অনুমতি দিতে বাধ্য হয়।