শিরোনাম
◈ আমি মদ খাই, আমার লাইসেন্স আছে: চাঁদপুরে আটক হওয়া তরুণী (ভিডিও) ◈ সতর্ক করল সরকার: ক্ষতিকর রঙ মিশিয়ে ‘মুগ’ ডাল নামে বিক্রি ◈ সঞ্চয়পত্র সিস্টেমে জালিয়াতি: বাংলাদেশ ব্যাংকের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল জালিয়াত চক্র ◈ চালু হচ্ছে ‘এনইআইআর’: অবৈধ মোবাইল বন্ধ, বিদেশি ফোনেও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন হওয়ার সুযোগই নেই: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ আরও এক দেশে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে সুখবর ◈ নির্বাচনকালীন পদায়ন নভেম্বরেই, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভোটের তারিখ ঘোষণা ◈ ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন সবার জন্য উন্মুক্ত করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ◈ শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা তাঁর অতীত ভুলে যাচ্ছেন—শফিকুল আলম ◈ বিশ্বব্যাংকে সালিশি মামলা করেছেন এস আলম, আবেদনে যা আছে

প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৫৭ বিকাল
আপডেট : ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সেন্ট মার্টিনে বিরল কাঁটাযুক্ত পটকা মাছের দেখা, জীববৈচিত্র্য ফিরছে দ্বীপে

বঙ্গোপসাগরের বুকে ৮ বর্গকিলোমিটারের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। এর দক্ষিণের বিচ্ছিন্ন আরেকটি দ্বীপ ছেঁড়াদিয়া। ১৭ অক্টোবর জোয়ারের সময় ছেঁড়াদিয়ার পশ্চিম সৈকতে আটকে পড়ে একটি মাছ। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান তখন ছেঁড়াদিয়ায় অবস্থান করছিলেন। দ্রুত কাছে গিয়ে দেখেন একটি বিরল প্রজাতির পটকা মাছ। সাধারণত এই এলাকায় তেমন চোখে পড়ে না এই মাছ। মাছটির শরীরজুড়ে কাঁটা। দ্বীপের অন্য এলাকার সাগরে দুই প্রজাতির পটকা দেখা গেলেও বিচিত্র রঙের সুন্দর পটকা মাছটি এর আগে দেখেননি তিনি। আর মাছটি দেখে উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেননি। কারণ, এই প্রজাতির মাছের উপস্থিতি দ্বীপের প্রাণবৈচিত্র্য ফিরে আসার বড় লক্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, কাঁটাযুক্ত পটকা মাছের উপস্থিতি প্রমাণ করে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সুফল ফলতে শুরু করেছে। এ কারণে দ্বীপে কাঁকড়া, কাছিমসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে।

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের নেওয়া তিন বছরব্যাপী প্রকল্পের নাম ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন প্রকল্প’। প্রকল্পের আওতায় দ্বীপের সৈকতে কেয়াবাগান সৃজন, পরিবেশ বিষয়ে লোকজনকে সচেতন করতে বালুচরে একাধিক বিলবোর্ড স্থাপন, সামুদ্রিক মা কাছিমের ডিম পাড়ার স্থান চিহ্নিতকরণ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে তথ্য সংগ্রহ এবং প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজ চলছে। কামরুল হাসান ওই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি)।

প্রকল্প পরিচালক কামরুল হাসানের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল ১৬ থেকে ১৮ অক্টোবর সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অবস্থান করে দ্বীপের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। এ সময় এই দলের সদস্যরা পুরো দ্বীপ এলাকা ঘুরে দেখেন। যাতায়াত নিষিদ্ধ এলাকা ছেঁড়াদিয়া, গোলদিয়া ও দিয়ারমাথাও পরিদর্শন করেন তাঁরা।

কামরুল হাসান বলেন, পরিদর্শনের সময় সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পরিযায়ী পাখি, গাঙচিল, বালুচরে লাল কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকের বংশবিস্তারের দৃশ্য তিনি দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু ছেঁড়াদিয়া সৈকতের কাঁটাযুক্ত সুন্দর মাছটি তাঁকে হতবাক করেছে। এই জাতের মাছ একমাত্র সেন্ট মার্টিনের প্রবালপ্রাচীর, পাথুরে রিফ এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করে। এই মাছ শক্ত খোলসযুক্ত শামুক, কাঁকড়া ও মেরুদণ্ডী প্রাণী শিকার করে খায়। বড় কোনো মাছের সামনে পড়লে পটকা পানি বা বাতাস গিলে নিজের শরীরকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে ঝুঁকি থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করে। শরীর ফুলে গেলে তীক্ষ্ণ কাঁটাগুলো বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে। এই মাছের উপস্থিতি দ্বীপের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের উপস্থিতির প্রমাণ।

গবেষকেরা বলছেন, এই প্রজাতির পটকা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ডায়োডন হলোকানথাস (Diodon holocanthus)। একে দীর্ঘ-কাঁটাযুক্ত পোর্কুপাইন ফিশও বলে (long-spine porcupinefish)। গায়ের রং হালকা বাদামি। গায়ে ছোট ছোট কালো বিন্দু দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিন্দুগুলোর সংখ্যা কমে আসে। পূর্ণবয়স্ক মাছের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্বজুড়ে উষ্ণমণ্ডলীয় সমুদ্র ও মহাসাগরের উষ্ণ পরিবেশে এদের দেখা যায়। এই প্রজাতির পটকা মাছের এই উপস্থিতির দ্বীপের প্রবালসহ নানা সামুদ্রিক প্রাণীর নির্বিঘ্নে বেড়ে ওঠার লক্ষণ। অর্থাৎ দ্বীপের প্রতিবেশ ও পরিবেশের ক্ষত সেরে উঠছে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।

সেন্ট মার্টিনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাজির হোসেন বলেন, দ্বীপের চতুর্দিকে সাদা প্রজাতির পটকা মাছের দেখা মিললেও কাঁটাযুক্ত সুন্দর পটকা মাছ তেমন চোখে পড়ে না। ছেঁড়াদিয়ায় এই মাছের বিচরণ বাড়ছে। সেখানকার প্রবালপ্রাচীরের ভেতরে এই মাছ বসবাস করে। ছোট ছোট রঙিন মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি ও শামুক-ঝিনুক খেয়ে বাঁচে।

সেন্ট মার্টিনে ২৩ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করছেন দ্বীপের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা জমির হোসেন। তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন সাগরে জেলেদের জালে তিন প্রজাতির পটকা ধরা পড়ে। সাদা জাতের পটকা লম্বায় আড়াই থেকে তিনি ইঞ্চি হয়। আর কালো দাগযুক্ত বড় পটকা লম্বার ১২-২০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার কালো জাতের পটকাতে সাদা দাগ থাকে। এই জাতের পটকা লম্বায় ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। বিষাক্ত এই পটকা মাছ খেয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। এ কারণে মানুষ পটকা মাছ খায় না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন সেন্ট মার্টিনে প্রবাল, শৈবাল, কাছিম, শামুক, ঝিনুক, সামুদ্রিক মাছ, কাছিম, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, কাঁকড়াসহ ১ হাজার ৭৬ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াতে বিধিনিষেধ, প্লাস্টিকসহ নানা পণ্য ব্যবহার কমানোসহ নানা পদক্ষেপের কারণে দূষণ কমছে। দ্বীপটির প্রকৃতিতে ধীরে ধীরে ভারসাম্য ফিরছে বলে মনে করেন পরিবেশবিদেরা। সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়