এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে: বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার পরিচিত গাছ তালগাছ। একসময় মাঠে-ঘাটে, রাস্তার পাশে সারি সারি তালগাছ দেখা যেত, এখন তা চোখেই পড়ে না। পরিবেশবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত বিলুপ্ত হচ্ছে তালগাছ।
বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা, বরগুনা, পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় তালগাছ বিলুপ্তপ্রায়। রোপণে মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়াও এর অন্যতম কারণ। বিভিন্ন উৎসবে তালগাছ রোপণের কথা বলা হলেও বাস্তবে উদ্যোগ দেখা যায় না।
তালগাছ শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এটি বজ্রপাত প্রতিরোধ, নদীভাঙন রোধ ও পুষ্টিকর ফলের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। তালফল ও রস দিয়ে তৈরি হয় গুড়, মিছরি, তাড়ি, পিঠা ও পায়েস। কাঁচা তালের শাঁস গ্রীষ্মকালে শরীর শীতল রাখে। পাতা দিয়ে তৈরি হয় পাখা, ছাউনি, চাটাই; কাঠ দিয়ে ঘর ও নৌকা।
তালগাছের আয়ু শতবর্ষ ছাড়িয়ে যায়। এটি রোগবালাইমুক্ত, কিন্তু পুরুষ ও নারী গাছ আলাদা হওয়ায় চাষে আলাদা যত্ন প্রয়োজন। গাছ প্রতি ৪০০-৫০০টি ফল ধরে, যার ওজন ১-৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁসহ বরেন্দ্র অঞ্চলেও এক সময় মাঠের আইল, পুকুর পাড় ও বাড়ির আঙিনায় তালগাছ দেখা যেত। এখন তা শুধুই স্মৃতি। তাল পাকা ভাদ্র মাসে দুপ করে পড়ে যাওয়া, কৃষকের বিশ্রাম, পাখির বাসা—সবই এখন অতীত।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, কৃষি ও বন বিভাগ উদ্যোগী হয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করলে আবারো ফিরে আসতে পারে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তালগাছ। বৃক্ষরোপণ মৌসুমে তালবীজ বা চারা রোপণের ওপর জোর দিতে হবে।
তালগাছ শুধু একটি গাছ নয়—এটি পরিবেশ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সময় থাকতে রক্ষা না করলে হারিয়ে যাবে এক অমূল্য সম্পদ।