নারায়ণগঞ্জে ২৯ লাখ টাকায় সরকারি খেয়াঘাট ইজারা নেওয়ার পর নীতিমালা লঙ্ঘন করে ৭০ লাখ টাকায় হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের রাজাপুর খেয়াঘাটের ইজারা বাতিল করেছে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ওই ঘাট থেকে দৈনিক খাস আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইজারাদার হাসান আলী নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের পশ্চিম গোপালনগর এলাকার বাসিন্দা। তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। এ বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ফেরিঘাট (খেয়াঘাট/ গুদারাঘাট) ইজারা দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির পক্ষ থেকে প্রায় ২৯ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে হাসান আলীকে রাজাপুর গুদারাঘাটের ইজারা প্রদানের প্রাথমিক চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু হাসান আলী খেয়াঘাটটি পরিচালনার জন্য জনৈক কামাল হোসেনসহ কয়েকজনের কাছে ৭০ লাখ টাকায় হস্তান্তর করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, প্রায় ২৯ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বিএনপি হাসান আলী রাজাপুর খেয়াঘাটের ইজারা পেয়েছিলেন। তিনি নিজে পরিচালনা না করে বেশি টাকায় অন্যের কাছে হস্তান্তর করেছেন। যার অডিও কথপোকথন ও সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, যা ইজারা নীতিমালার লঙ্ঘন। তাই খেয়াঘাটের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। সেখানে খাস আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইজারা বাতিলের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেরিঘাটের ইজারা ও ব্যবস্থাপনা এবং উদ্ধৃত আয়বণ্টন–সম্পর্কিত নীতিমালার অনুচ্ছেদ ২–এর উপ–অনুচ্ছেদ(ঠ) অনুযায়ী, ইজারাদার কোনোক্রমেই ইজারাপ্রাপ্ত খেয়াঘাট অন্যের কাছে ইজারা বা বন্দোবস্ত দিতে পারবেন না। যদি অনুরূপ কার্যকলাপ বা চুক্তিপত্রের কোনো শর্তের লঙ্ঘন ঘটে, তবে ইজারাদারের ইজারা বাতিল বলে গণ্য হবে ও জমাকৃত টাকা বাজেয়াপ্ত হবে এবং ইজারাদার আইনত দণ্ডনীয় হবেন। এ ক্ষেত্রে অবশিষ্ট সময়ের জন্য ওই ফেরিঘাট পুনরায় ইজারা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু বক্তাবলী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন ও একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ইজারাদার হাসান আলী ইজারাপ্রাপ্ত হয়ে নিজে পরিচালনা না করে অধিক টাকার বিনিময়ে অন্যের নিকট ইজারা বা বন্দোবস্ত প্রদান করেছেন, যা নীতিমালার পরিপন্থী এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই রাজাপুর খেয়াঘাটের ইজারা নীতিমালার আলোকে বাতিল করা হলো এবং জমাকৃত টাকা বাজেয়াপ্ত করা হলো। খেয়াঘাটে দৈনিক খাস আদায়ের জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। উৎস: প্রথম আলো।