শিরোনাম
◈ হায়দরাবাদে দেহ ব্যবসা থেকে বাংলাদেশি কিশোরী উদ্ধার, ফের আলোচনায় আন্তদেশীয় মানব পাচার চক্র ◈ বিদ্যালয়ে ঢুকে সহকারী শিক্ষককে মারধর করে বাজারে ঘোরানো, বিএনপি-ছাত্রদলের কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ◈ আমরা বাসস্ট্যান্ড- লঞ্চঘাট দখল করি, আর জামায়াত দখল করে বিশ্ববিদ্যালয়: বিএনপি নেতা আলতাফ (ভিডিও) ◈ তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেফতারে আলটিমেটাম ◈ রাখাইনে সংঘাত: সীমান্তে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢোকার আশঙ্কা ◈ চিকিৎসা পেশা নিয়ে আসিফ নজরুলের মন্তব্য রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানের শামিল: এনসিপি ◈ পাতাল মেট্রো রেলের খরচ বেড়ে ৫৯ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা ◈ চিকিৎসকদের কাছে আইন উপদেষ্টার দুঃখ প্রকাশ ◈ দেশ যেন মৌলবাদের অভয়ারণ্য না হয়: তারেক রহমান ◈ বিদেশে ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:৩৯ রাত
আপডেট : ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৭১ এই দিনে নন্দীগ্রামে চালানো হয় গণহত্যা

লাশের স্তুপে পরে থাকা কানাই লাল জানালেন সেই নৃশংস গণহত্যার ঘটনা

জিল্লুর রয়েল, নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আট দিনের মাথায় অর্থাৎ ৪ এপ্রিল বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের বামনগ্রামে চালানো হয় গণহত্যা। স্থানীয় রাজাকার ও আলবদরদের সহায়তায় পাক-হানাদার বাহিনীর সদস্যরা এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালান। এতে নিহত হন নয়জন মুক্তিকামী বাঙ্গালী। ওই নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্যে থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান কানাই লাল প্রামানিক নামের একজন মুক্তিকামী বাঙ্গালী।

সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা বর্ণনা করেন লাশের স্তুপে পরে থাকা কানাই লাল প্রামানিক। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জীবন বাঁচাতে আমি, আমার ছোট ভাই বলরাম প্রামানিক ও আমার মামা রমানাথ সরকার নিজ বাড়ি কাহালু উপজেলার ওলাহালী গ্রাম হতে নন্দীগ্রামের বামনগ্রাম বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেই। সেসময় বামনগ্রামকে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা জন্য প্রতি রাতে পালাক্রমে পাহারা দেওয়া হতো। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল রবিবার জ্যোৎস্নার রাতে গ্রাম পাহারার জন্য বামনগ্রামের আমার ভগ্নিপতি মনিন্দ্র সাহা, ভগ্নিপতি বাবা পূর্ণ চন্দ্র সাহা, প্রাণকান্ত প্রামানিক, প্রাণবন্ধু কবিরাাজ, ভাগবজর গ্রামের গ্রাম পুলিশ সুখী রবিদাস, নাগরকান্দি গ্রাম হইতে বামনগ্রামে আশ্রয় নেওয়া রবিচন্দ্র প্রামানিক, সিংড়া উপজেলার খন্দকার বরবরিয়া গ্রাম হইতে বামনগ্রামে আশ্রয় নেওয়া রামদেব রবিদাস, আমার ছোট ভাই বলরাম চন্দ্র প্রামানিক, আমার মামা রামনাথ সরকার ও আমি দায়িত্বে ছিলাম।

পাক সেনাদের জানানো হয়েছিল বামনগ্রামে মুক্তি যোদ্ধারা আছে। ওই খবরের ভিত্তিতে রাত আনুমানিক ২টার দিকে ১৫-২০ জন পাক সেনা ও কয়েকজন রাজাকার বামনগ্রামে আক্রমণ করে। পাক সেনাদের গ্রামে ঢুকতে দেখেই আমরা সবাই চিৎকার করে গ্রামের লোকজনদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলি। আমরা ১০ জন লাঠি নিয়ে পাক সেনাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করি। পরে তারা আমাদের ধরে ফেলে। আমাদেরকে দিয়ে বাড়ি বাড়ি ডেকে আরো কয়েকজনকে আটক করে তারা। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। করা হয় লুটতরাজ। পাহারাদার ১০ জন ছাড়া যারা ছিলো সবাইকে রাইফেল দিয়ে পিটিয়ে ও বুট জুতার লাথি মেরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এরপর আমাদের ১০ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বামনগ্রামের সুখ-দুখ পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে। সেখানে একটি নালার ধারে লাইন করে দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদের। একে একে গুলি করে লাথি মেরে ওই নালার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। আমার গায়ে চাদর জোরানো ছিল। আমাকে তিনটি গুলি করা হয়। লাথি মেরে আমাকেও নালার মধ্যে ফেলে দেয় তারা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে ছিলাম আমি। ওই রক্তাক্ত লাশের স্তুপের মধ্যে আমিও পরে ছিলাম। জ্ঞান ফেরার পর দেখি পূর্বদিকে সূর্য উঠতে শুরু করেছে। আবার মানুষের আনাগোনা কানে আসছে। তখন হামাগুড়ি দিয়ে নালার উপরে উঠে বসি। দেখি ছোট ভাই বলরাম জলজল করছে। ভাই বলরাম ছাড়া সেখানে আর কেউ বেঁচে নেই। পুকুর থেকে গামছা ভিজে ভাই বলরামের মুখে জল দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ভাই আমার মরে যায়। গ্রামের লোকজন পরে আমাকে পাড়ার ভিতর নিয়ে যায়। তার পড়েতো জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে যায়।

তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, এখন আমি নিজ এলাকার এরুইল বাজারে ছোট একটি হোটেল দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। ওইদিন আমার ভাই, মামা, ভগ্নিপতিসহ কয়েকজন স্বজনকে হারালাম। কোন সরকার বা ব্যক্তি এই আত্মগের মর্যদা দেয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়