শিরোনাম
◈ টেলিকম নীতিমালায় সরকারের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে উদ্বেগ বিএনপির, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণমূলক আলোচনার দাবি ◈ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ: আলোচনায় একাধিক বিকল্প ◈ ফলকার টুর্ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল ভেনেজুয়েলার পার্লামেন্ট ◈ ভোলায় স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: প্রধান আসামিসহ তিনজন গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত নেতারা দল থেকে বহিষ্কৃত ◈ মুরাদনগরে মাদককারবারির অভিযোগে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা, একজন গুরুতর আহত ◈ গণঅভ্যুত্থান সরকারের কেউ কেউ ‘লুটপাট’ করে বেহুঁশ হওয়ার দশা: ইশরাক হোসেন ◈ যে কারণে পিআর পদ্ধতি চায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন ◈ ‘মেগাস্টার’ শব্দকাণ্ডে বিতর্ক: “আমি মানুষটা ছোট, অন্যকে ছোট করব কীভাবে” — জাহিদ হাসান ◈ এবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন শিল্পকলার চারুকলা পরিচালক ◈ কেশবপুর পৌরসভার  সাবেক মেয়র রফিকুল গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর, ২০২৪, ০১:১৫ দুপুর
আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু না হলেও খোলা আছে খরচের খাতা, কোটি টাকা লোপাট

আবু নাসের হুসাইন, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি ফরিদপুরের সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। যে কারণে ভর্তি করা হয় না কোনো রোগী। তবে হাসপাতালটির কার্যক্রম পুরোপুরি চালু না হলেও খরচের খাতা পুরো স্বচ্ছল রেখেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী আব্দুল মমিন। এরই ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে সরকারি ওষুধ উধাও করে দিয়ে চিকিৎসকরা কোম্পানির ওষুধ লিখে দিচ্ছেন অসহায়-গরীব রোগীদের।

হাসপাতালে অনুসন্ধানে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্টাফরা জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কাজী আব্দুল মমিন সালথায় যোগদানের পর থেকে সাধারণ রোগীকে হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ভাতার টাকা আত্মসাত ও আনুতোষিক ভাতা নয় ছয় করে আসছেন তিনি। এমনকি ভিটামিন-এ প্লাস ক্যাম্পেইন, খুদে চিকিৎসক ক্যাম্পেইন ভাতা ও মাঠকর্মীদের সম্মানি ভাতা পর্যন্ত নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নেন তিনি। ভুক্তভোগী স্টাফরা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে নানাভাবে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়।

হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে খরচ দেখিয়ে বিল ভাউচার প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট রাজস্ব খাত থেকে লাখ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এর মধ্যে পেট্রোল-ওয়েল খরচ বাবদ ৫ লাখ ২৮ হাজার, পরিছন্নতা বাবদ ৪ লাখ ৯৬ হাজার, বিজ্ঞাপন বাবদ ৩৪ হাজার, চিকিৎসা সরঞ্জাম বাবদ ২৯ লাখ ৫৪ হাজার, কম্পিউটার সামগ্রী বাবদ ৩হাজার ৮০০, স্ট্যাম্প-সীল বাবদ ১৪ হাজার, মনিহারি বাবদ ৯৩ হাজার, মোটরযান মেরামত বাবদ ৯৯ হাজার, যন্ত্রপাতি মেরামত বাবদ ৭০ হাজার, ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ ২হাজার ৫৩৭ টাকা, আসবাবপত্র মেরামত বাবদ ৩২ হাজার, অফিস সরঞ্জাম মেরামত বাবদ ৫০ হাজার, কম্পিউটার মেরামত বাবদ ৪৬ হাজার, আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ ৪৪ হাজার ও প্রকাশনা বাবদ ৪৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

তবে উত্তোলন করা এসব টাকা কোন খাতে সঠিক কত খরচ করা হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। স্টাফদের দাবি, ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে বেশিরভাগ টাকা আত্মসাত করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। কারণ হাসপাতালে পরিছন্নতা কর্মী নেই। যে কারণে নোংরা পরিবেশে চলছে হাসপাতালে কার্যক্রম। বাথরুমগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী। অথচ পরিছন্নতা বাবদ খরচ দেখিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ঠিকমত রোগীর সেবা দেওয়া হয় না। বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পুরোপুরি বন্ধ। অথচ পেট্রোল-ওয়েল খরচ বাবদ ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু এই দুটি খাত নয়, প্রতিটি খাতে সঠিক খরচের চেয়ে ডাবল দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এসব বিষয় সঠিক তদন্ত হলে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে।

অন্যদিকে স্থানীয় আবুল হোসেন ও নাসিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষক ও দিনমুজুর। এরা রোগে আক্রান্ত হলে তাদের একমাত্র ভরসা সরকারি এই হাসপাতাল। তবে হাসপাতালে গিয়ে সরকারি ওষুধ পাওয়া যায় না। চিকিৎসকরা রোগনির্ণয় করে অসহায় রোগীদের হাতে লিখে দিচ্ছেন বিভিন্ন কোম্পানির দামি ওষুধের কাগজ। যা কিনে খাওয়ার সক্ষমতা অনেকের নেই। ফলে সরকারি ওষুধ না পেয়ে রোগা শরীর নিয়ে খালি হাতে ফিরে যান তারা।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তাই সরকারি ওষুধ উধাও করে দিয়ে রোগীদের বড় কোম্পানির ওষুধ লিখে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে চুক্তি অনুযায়ী ওষুধ লিখে দিচ্ছে কি না তা পরীক্ষা করতে হাসপাতালে আসা ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের টানাহেঁচড়ায় অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন রোগীরা।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাজী আব্দুল মমিন বলেন, এসব টাকা গত অর্থবছরে তোলা হয়েছে। সব টাকারই কাজ করা হয়েছে। ভুয়া বিলে কোনো টাকা উত্তোলন করা হয়নি। যেখানে যত টাকা লেগেছে, তাই খরচ দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে। গত বছর অ্যাম্বুলেন্স চলেছিল। তবে এখন চলছে না। পরিচ্ছন্নতার কাজও হয়েছিল। অতএব এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকালে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাজেদা বেগম পলিন বলেন, এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় আমার জানা নেই। তবে সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এসব দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয় যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়