অনুজ দেব, চট্টগ্রাম: মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা প্রায় সাড়ে ৩টা। ঘটনাস্থল চট্টগ্রামের মুরাদপুর। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের দুই পক্ষে চলছিল তুমুল সংঘর্ষ। এসময়টাতেই লালখান বাজারের বাসা থেকে ভাত খেয়ে কর্মস্থলে ফিরছিলেন শুলকবহরের একটি ফার্নিচার কারখানার শ্রমিক মো. ফারুক। সংঘর্ষের মধ্যেই বুকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে নগরের লালখান বাজারের বাসা থেকে ছুটে আসেন সীমা আকতার। সঙ্গে ছিলেন বাবা মো. শহীদ ও শ্বশুর মো. দুলাল। মো. ফারুকের মরদেহ তখন পড়ে আছে লাশ ঘরে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের লাশঘরের সামনেই বিলাপ করছিলেন সীমা। সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দেখেই তার প্রশ্ন- ছবি তুলে আর কী করবেন। প্রশাসন চাইলে কি এসব বন্ধ করতে পারত না? আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে।
সীমা বলেন, আমাদের সংসারে উপার্জনের আর কেউ নেই। আমার দুই সন্তান বাপ ডাকবে কাকে। আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। ছেলেমেয়েগুলো এখনো নাবালক, আমার সন্তানদের কে দেখবে। আমার ছেলেমেয়েরা এখনো জানে না, তাদের বাবা নেই। কী বলব তাদের, তা জানি না।
নিহত ফারুকের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। ফারুক ও সীমা আকতারের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ফাহিম বাগমনিরাম সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। মেয়ে ফাহিমা বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কেজি শ্রেণির ছাত্রী।
চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে মো. ফারুকসহ এ পর্যন্ত তিন জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মারা যাওয়া অন্য দু’জন হলেন- চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মো. ওয়াসিম আকরাম (২২) ও নগরীর ওমরগণি এম ই এস কলেজের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২১)। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের আহত অন্তত ৮০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
আপনার মতামত লিখুন :