জাহিদুল হক, মানিকগঞ্জ: [২] মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা নদী থেকে শুষ্ক মৌসুমে নদীর মাটি কেটে দেদাড়ছে সাবাড় করছে একটি চক্র। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন চলছে মাটির এই রমরমা ব্যবসা। ইটভাটা থেকে শুরু করে সরকারের উন্নয়ন কাজে বিক্রি হচ্ছে এই মাটি। ভাড়ী বাহনে মাটি আনা নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সড়কের। তীব্র ধুলাবালিতে স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়েছে এলাকাবাসী।
[৩] সরেজমিনে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া এবং সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম এলাকা ঘুরে কালীগঙ্গা নদীর একাধিক স্থান থেকে এই মাটি উত্তোলন করতে দেখা গেছে।
[৪] অবৈধ এই মাটি ব্যবসার মূল হোতা জাগীর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন হোসেন। ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে আসার পর থেকে কয়েক বছরের মাথায় তিনি বনে গেছেন এলাকার প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী। হয়েছেন একাধিক মালবাহী গাড়ীর মালিক। এলাকায় মাটির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করেই গড়েছেন তার আয়েশী জীবন।
[৫] ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার আগ পর্যন্ত তেমন কোন পদবী ছিল না এই মাটি ব্যবসায়ী মামুনের। তবে নিয়ন্ত্রন করতেন এলাকার কিশোর গ্যাং। ছিল চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ।
[৬] কমিটিতে আসার দুবছরের মাথায় তার ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। একই সাথে মাটি ব্যবসা এবং অবৈধ মাটি পরিবহনে তৈরি করেছেন পরিবহন সিন্ডিকেট। ক্ষমতাশীন এই নেতা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করে সবসময়ই থেকেছেন প্রশাসনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এলাকায় শক্ত অবস্থানের কারনে সাধারণ মানুষ তার অবৈধ কাজের জন্য মুখ খুলতে সাহস করেন না।
[৭] জানাগেছে, কালীগঙ্গা নদী থেকে ধলেশ্বরীর উৎসমুখ সাটুরিয়ার তিল্লি থেকে গোপালপুর হয়ে গাজীখালী পর্যন্ত ৪৫.৫ কিলোমিটার খনন শুরু হয় ২০১৯ সালের নভেম্বরে। পাঁচটি প্যাকেজে এ খনন কর্মসূচির চুক্তি মূল্য ধরা হয় ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সময় সংযোজন করে কাজ শেষ হয় ২০২১ সালে।
[৮] নদী খননের পর পানি প্রবাহ ঠিক থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে হয়ে যায় ধু-ধু বালুচর। তখনই অবৈধ পন্থায় অপরিকল্পিতভাবে কাটা হয় বালু। এতে করে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়, শুরু হয় ভাঙ্গনের।
[৯] নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, সরকার নদী খনন করে যাওয়ার পর অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটায় পুনরায় আমাদের ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসলেই আমরা তীব্র নদী ভাঙনের স্বীকার হচ্ছি। আর মাটি নিয়ে বড়-বড় যানবাহন চলাচলে সড়ক দেবে যাচ্ছে।
[১০] অবৈধ এই মাটি ব্যবসায়ীর সাথে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাগীর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মামুন হোসেন বলেন, ‘সব সাইট তো আর আমি চালাই না, একাও চালাই না। আমার এখন কোন মাটির সাইড চলছে না। নিয়মের বাইরে কিছুই করি নাই।’
[১১] ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা দীপক ঘোষ বলেন, সরকারিভাবে পরিকল্পিত ভাবে নদী খননের পর অসাধু ব্যবসায়ীদের অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন খুবই দুঃখজনক। এর কারনে ভাঙ্গনের স্বীকার হচ্ছে জনপদের মানুষ। আমরা এর প্রতিকার চাই।
[১২] এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রেহানা আকতার বলেন, অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :