ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড় যাত্রী ছাউনির ফুটপাতটি মাত্র আট ফুট চওড়া। এরই মাঝ বরাবর স্টিলের যাত্রী ছাউনি। তার মধ্যে বসানো হয়েছে বেঞ্চ। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পথচারীদের চলাচল।
এমন আরও ৪৬টি যাত্রী ছাউনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
যাত্রী ও পথচারীদের অভিযোগ, ঢাকা শহরে অধিকাংশ ফুটপাত হকারদের দখলে। এ কারণে ঠিকমতো হাঁটা-চলা করতে পারেন না পথচারীরা।
এর মধ্যে ফুটপাতের মাঝ বরাবর যাত্রী ছাউনি স্থাপন শুরু করছে ডিএসসিসি। এতে পথচারীদের ভোগান্তি আরও বাড়ছে।
ডিএসসিসির প্রকৌশল দপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস রুট রেশনালাইজেশনের অংশ হিসেবে এসব যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হচ্ছে। ফুটপাতে স্থাপন করা এসব যাত্রী ছাউনির সামনে অংশে যাত্রীরা দাঁড়াবেন বা বসবেন।
পেছন দিয়ে পথচারীরা চলাচল করবেন। যাত্রীদের সুবিধার জন্যই এ পদ্ধতিতে ছাউনিগুলো স্থাপন করা হচ্ছে।
তবে যেসব ফুটপাত চওড়া কম, সেগুলোতে কেন মাঝ বরাবর যাত্রী ছাউনি বসাতে হবে কেন?- এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৪তম সভায় আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে আরও দুটি রুটে ঢাকা নগর পরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
এরমধ্যে ২২ নম্বর রুট তথা ঘাটারচর-ওয়াশপুর-বসিলা-মোহাম্মদপুর টাউন হল-আসাদ গেট-ফার্মগেট-কাওরানবাজার-শাহবাগ-কাকরাইল-ফকিরাপুল-মতিঝিল-টিকাটুলি-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-কোনাপাড়া-ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত নগর পরিবহন চলবে। একই দিন ২৬ নম্বর রুটের ঘাটারচর-ওয়াশপুর-বসিলা-মোহাম্মদপুর-টাউন হল-আসাদ গেট-কলাবাগান-সায়েন্স ল্যাব-নিউ মার্কেট-আজিমপুর-পলাশী-চাঁনখারপুল-ফ্লাইওভার হয়ে-পোস্তগোলা কদমতলীতে নগর পরিবহন চলবে।
এছাড়া আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ২৩ নম্বর রুটের ঘাটারচর-ওয়াশপুর-বসিলা-মোহাম্মদপুর-জাপান গার্ডেন সিটি-শ্যামলী-কলেজ গেট-আসাদ গেট-কলাবাগান-সায়েন্স ল্যাব-শাহবাগ-মৎস্য ভবন-প্রেস ক্লাব-গুলিস্তান (জিরো পয়েন্ট)-দৈনিক বাংলা-রাজারবাগ-কমলাপুর-ধলপুর-যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া-রায়েরবাগ-মাতুয়াইল-সাইনবোর্ড-চিটাগং রোডে বাস চলবে।
এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত ২১ নম্বর রুটে নগর পরিবহন উদ্বোধন করা হয়।
বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি সূত্র জানায়, এ চারটি রুটের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) অংশে ২১ নম্বর নতুন ২১টি, ২২ নম্বর রুটে সাতটি, ২৩ নম্বর রুটে ১১টি ও ২৬ নম্বর রুটে সাতটি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করেছে ডিএসসিসি।
এর অধিকাংশ যাত্রী ছাউনিই ফুটপাতের মাঝ বরাবর স্থাপন করা হচ্ছে। এতে যারা নগর পরিবহনে ওঠা-নামা করবেন, তাদের সমস্যা হবে না।
গত ৪ সেপ্টেম্বর মৎস্য ভবন মোড়ে এমন একটি যাত্রী ছাউনির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার। তার পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, যাত্রী ছাউনি থেকে বাস ওঠার কোনো ব্যবস্থা নেই।
যাত্রী ছাউনির সামনে কংক্রিটের রেলিং দেওয়া। তিনি তার পোস্ট লেখেন, ঢাকা দক্ষিণের বাস স্টপ। শুধু এটা থেকে যাত্রী বাসে উঠবে কীভাবে বুঝি নাই। এটার অবস্থান হলো শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবনের দিকে যেতে হাতের বামে।
দৈনিক বাংলা আর ফকিরাপুল পানির ট্যাংকের মাঝখানে একটা আছে, একদম ফুটপাতের মাঝখানে করা। মজার বিষয় হচ্ছে ওই রাস্তা দিয়ে কোনো বাসই চলে না। ফুটপাথ মাঝ বরাবর দখল হওয়ার ফলে মানুষ হাঁটতেও পারছে না।
ধানমন্ডি গভ: বয়েজ হাই স্কুলের সাথে ২৭ নম্বর বাস স্টপে এমন একটা দিয়েছে। সাথে দুইটা চা সিগারেটের টং দোকান করতে দিয়েছে। বাচ্চারা যাওয়ার সময় এর ভেতর দিয়ে যেতে হয় প্রতিদিন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট আর রমনা পার্কের ওখানে আছে আরও দুইটা।
এই বাস স্টপ দেখে নিশ্চয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা হচ্ছে, যেমন রাত বারোটায় ওষুধের দোকান বন্ধ করার পর হয়েছে।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, মৎস্য ভবন মোড় সংলগ্ন রমনা পার্কের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ফুটপাতের মাঝ বরাবর যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে চলার পথে পথচারীদের সমস্যা হচ্ছে।
যাত্রী ছাউনির সামনে কংক্রিটের রেলিংয়ের একাংশ সদ্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এ ছাউনিতে কোনো যাত্রীকে দেখা যায়নি কিংবা নগর পরিবহনের কোনো বাসও থামেনি।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে হেঁটে সেগুনবাগিচা যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী মতিন আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, এমনিতেই ফুটপাতে হাঁটার জায়গা নেই। তার মধ্যে ফুটপাতের মাঝ বরাবর যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে।
কোন প্রকৌশলীর মাথা থেকে এই আইডিয়া আসছে, আল্লাহই ভালো জানেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত যাত্রী ছাউনিগুলো ফুটপাতের সামনে রেখে করা হয়।
কিন্তু নগর পরিবহনের জন্য ফুটপাতের মাঝ বরাবর যাত্রী ছাউনিগুলো স্থাপন করতে বলেছেন মেয়র ও বাস রুট রেশনালাইজেশনের আহ্বায়ক শেখ ফজলে নূর তাপস। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।
এরমধ্যে গত কয়েকদিন ধরে মৎস্য ভবন মোড়ের যাত্রী ছাউনির ছবি ফুসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তাই বুধবার এ যাত্রী ছাউনির সামনের রেলিং অপসারণ করা হয়েছে। যাত্রী ছাউনির ফিনিশিংয়ের কাজ এখনো বাকি আছে।
ডিএসসিসি এলাকায় ওই যাত্রী ছাউনিগুলো স্থাপনের কাজ করছে সংস্থাটির প্রকৌশল বিভাগের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল দপ্তর।
এ দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব খাদেম বলেন, নগর পরিবহনের যাত্রী সুবিধা নিশ্চিত করতেই যাত্রী ছাউনিগুলো ফুটপাতের মাঝে বসানোর হচ্ছে।
তবে এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। সূত্র: জাগোনিউজ