সালেহ্ বিপ্লব: বান্দরবানের লামায় রেংইয়েন পাড়ার একমাত্র পানির উৎসে বিষ প্রয়োগ করেছে একটি মহল। এর প্রতিবাদে এবং স্থানীয় আদিবাসীদের ৪০০ একর ভূমি রক্ষার দাবীতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ঢাকাস্থ আদিবাসী ছাত্র সংগঠনগুলো বিক্ষোভ সমাবেশের আযোজন করা হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চ্যং ইয়ুং ম্রো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দনওয়াই ম্রো'র সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি জানিযে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পিসিপি ঢাবি শাখার সদস্য শৈশানু মারমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই, লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি'র আহ্বায়ক রংধনু ত্রিপুরা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্সস কাউন্সিল (বিএমএসসি) এর ঢাকা মহানগরের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অংশুয়ে চিং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো প্রমুখ।
অনন্ত বিকাশ ধামাই বলেন, পাহাড়ের আদিবাসীদের ভূমি অধিকারের জন্য ভূমি কমিশন গঠিত হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর না হওয়ায় লামার মত আদিবাসী উচ্ছেদের ঘটনা বার বার ঘটতে চলেছে। আমি অবিলম্বে পার্বত্য ভূমি কমিশন কার্যকর সহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের জোর দাবী জানাচ্ছি।
অলীক মৃ বলেন, লামায় আদিবাসীদের জুম ভূমিতে আগুন দিয়ে প্রথমে তাদেরকে ভাতে মারার চেষ্টা করলো। তারপর আবার পানির উৎসে বিষ দিয়ে পানিতেও মারার চেষ্টা করছে রাবার কোম্পানির লোকজন। এসব ঘটনার কোনোটিরই সুরাহা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা আশা করি না। কেননা, বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি ঝেঁকে বসেছে তাতে আমরা কেউই নিরাপদ নই।
রেং ইয়ং ম্রো বলেন, আমরা দেখছি, লামার সরই ইউনিয়ন বলেন কিংবা চিম্বুকে পাঁচতারা হোটেল স্থাপন বলেন সবক্ষেত্রেই ভূমি দস্যুরা তৎপর। আমরা একের পর এক যে ঘটনাগুলো ঘটতে দেখছি সেখানে ভুমিপুত্রদের উচ্ছেদ করারই প্রয়াস লক্ষ করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই এসব হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, লামায় সরই ইউনিয়নের রেংইয়েন পাড়ার একমাত্র ঝিরিতে কোম্পানির লোকজনের বিষ প্রয়োগের যে ঘটনা সেটা একই সাথে বণ্য ও জলজ প্রাণী নিধন এবং মানুষ হত্যা চেষ্টা বলে আমরা মনে করি। প্রশাসনের পক্ষপাত মূলক আচরণ এই অপরাধকে দ্বিগুন প্ররোচিত করেছে।
রংধনু ত্রিপুরা বলেন, আমরা চারশত একর ভূমি ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত এই সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। আমাদের এই আন্দোলনে দেশের সকল প্রগতিশীল মানুষকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বুয়েটের শিক্ষার্থী অংশুয়ে চিং বলেন, ঝিরিতে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে গণহত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এর আগেও জুম ভূমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পুলিশকে সব জানানোর পরও তারা অভিযোগ আমলে নেননি। বরং স্থানীয় আদিবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব জবার আমরা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা করি।
পিসিপি ঢাবি শাখার সদস্য শৈশানু মারমা বলেন, লামার আদিবাসীদের ভূমি কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা আজকের নয়। বহু আগে থেকে তারা আদিবাসীদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। কিন্তু ভুলে যাবেন না, পাহাড়ীরা তাদের অধিকারের জন্য সশস্ত্র লড়াই করেছিল। যদি এভাবে দিন দিন ভূমি কেড়ে নিয়ে আমাদেরকে ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয় তাহলে পাহাড়ের জুম্ম ছাত্র সমাজ বসে থাকবে না।
সমাবেশে সংহতি জানায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।