সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা শুক্রবার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধের ফলে শাহবাগের চারপাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলন চলাকালে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
পিএসসি সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্মের অন্যতম শাহ আলম স্নেহ জানান, শাহবাগে পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন তারা। তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। একইসঙ্গে পিএসসি সংস্কারের জন্য তাদের ১০ দফা দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলেন।
শাহ আলম স্নেহ আরও বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির যুগেও পিএসসি ব্যাকডেটেড হয়ে আছে। ৪৪তম বিসিএসের ফলাফলে ৮০০-এর বেশি রিপিটেড ক্যাডার দেখা গেছে, যা পিএসসির দুর্বলতা প্রমাণ করে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যে তাদের দিনরাত অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
এর আগে বিকেলে ‘ছাত্র সমাবেশ’-এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ করে। এতে রাজধানীর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে, পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানান, অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি মারধরের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান।
আন্দোলনকারীদের উত্থাপিত ১০ দফা দাবিগুলো হলো:
১. ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল সংশোধন করে পুনরায় প্রকাশ করতে হবে। এক্ষেত্রে একই ক্যাডারে পুনঃসুপারিশ রোধে এবং বিদ্যমান ক্যাডারের নিচের ক্যাডারে সুপারিশ না হওয়ার জন্য ক্যাডার পছন্দক্রম প্রত্যাহার/পুনরায় পছন্দের সুযোগ দিতে হবে; ৪৪তম বিসিএসের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক অধিযাচনকৃত পদগুলো ৪৪তমকেই প্রদান করতে হবে; প্রহসনমূলক ও প্রশ্নবিদ্ধ ভাইভার মাধ্যমে ১৭৭০ জন রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী ফেল করায় পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
২. ৪৪তম বিসিএস থেকে চূড়ান্ত ফলাফলের সাথে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর প্রকাশ করতে হবে এবং ৪৭তম বিসিএস থেকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলের সময় নম্বর প্রকাশ করতে হবে।
৩. ৪৮তম বিশেষ বিসিএস (লিখিত) পরীক্ষা ৪৬তম বিসিএস লিখিত-এর সাথে ওভারল্যাপ হওয়ায় ৪৮তম বিসিএসের সময়সূচি যৌক্তিক সময়ে পুনরায় নির্ধারণ করতে হবে এবং বর্তমান সময় বিবেচনায় চিকিৎসকদের প্রার্থীতার বয়স ৩৪ বছর নির্ধারণ করতে হবে।
৪. ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষার (Recheck) সুযোগ দিতে হবে যা পরবর্তী বিসিএসেও প্রযোজ্য এবং ৪৫তম বিসিএস থেকে মৌখিক পরীক্ষা ১০০ নম্বরের চালু করতে হবে।
৫. "নন ক্যাডার বিধি-২০২৩" সংশোধন (প্রয়োজন সাপেক্ষে বাতিল) করে বিসিএস মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকলের চাকরির বন্দোবস্ত করতে হবে।
৬. কমিশন নিয়োগে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ মহলের পরামর্শে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৭. ভেরিফিকেশন হয়রানি লাঘবের ব্যবস্থা করতে হবে। ফৌজদারি মামলা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতায় দণ্ডিত সুস্পষ্ট অভিযোগ ব্যতীত চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্ত কোনো প্রার্থীর গেজেট আটকানো যাবে না। যদি কোনো প্রার্থীর গেজেট আটকানো হয় তাহলে তার সুস্পষ্ট কারণ প্রকাশ করতে হবে এবং গেজেট আটকানোর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সুযোগ থাকতে হবে।
৮. ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং ভবিষ্যতে ৪৬তম বিসিএস বাতিলের কোনো সম্ভাবনা তৈরি হবে না এই মর্মে নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. লিখিত খাতার মূল্যায়নে গতিময়তা, নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা আনয়নে কমিশনে বসে খাতা দেখার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. বিসিএস জট নিরসনে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করে অস্থায়ীভাবে কমিশনের বিজ্ঞ সদস্য সংখ্যার সীমা ২৫-৩০ জনে উন্নীতকরণ করতে হবে।