শাহীন খন্দকার : দিনকে দিন রাজধানীতে শিশু কিশোদের বিনোদন ও খেলার মাঠগুলো সংকোচিত হয়ে আসছে। যেটুকু রয়েছে ঈদ উৎসবের মধ্যে তার অধিকাংশই আবার বন্ধ থাকছে। তাই ঈদের ছুটিতে নগরবাসির বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। যদিও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোজার ঈদের চেয়ে কোরবানির ঈদে দর্শনার্থীদের সংখ্যা কমছিলো।
ঈদের তৃতীয় দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে চিড়িয়াখানায় আসেন শীলা ও আরিফ হাসান দম্পত্তি। শীলা দম্পত্তি জানালেন, চিড়িয়াখানায় আসতে যানজটের কোন দূর্ভোগ সহ্য করতে হয়নি। করোনামহামারিতে মেয়েরা ঘরে বদ্ধ জীবন-যাপন করেছেন।
শুধু শীলা দম্পত্তি নয়, গত দুটি বছর দেশের মানুষই উৎসবমুখোর পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। এই প্রথম সংক্রমন কিছুটা কম থাকায় মঙ্গলবার তারা পরিবারপরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। প্রথমে তারা সিদ্ধান্ত নেন ইতিহাস বিখ্যাত স্থানগুলো ঘুরবেন।
শীলা দম্পত্তি জানান, শাহবাগের শিশুপার্ক, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, স্বাধীনতা জাদুঘর এবং পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লার মতো দর্শনীয় কেন্দ্রগুলো রয়েছে বন্ধ। তিনি বলেন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দর্শনীয় স্থানগুলো বন্ধ। তাই জাতীয় চিড়িয়াখানায় চলে আসা। এখানে এখানে আজ লোকসমাগম কম দেখছি। পরিবেশটা বেশ সুন্দর।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টার পেরিয়ে মূল প্রবেশদ্বার পার হতেই ডান দিকে হরিণ। হরিণ দেখার জন্য দর্শনার্থীদের জায়গাটি ছিলো শিশু কিশোরসহ অভিবাবকদের পরিপূর্ণ। এর একটু সামনে বানরের খাঁচা। সেখানে বড়দের চেয়ে ছোট শিশুদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।
রাজধানীর মীরপুর পল্লবী থেকে আসা মামলী দম্পত্তি জানান, বাসার কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও ব্যস্ততার কারণে বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসা হয়নি। এবার এখানে এসে নাতিনেরা ভীষণ খুশি।
দীর্ঘ দুই বছর হঠাৎ এক সঙ্গে এতো মানুষ দেখতে পেয়ে চিড়িয়াখানায় থাকা বাঘ, সিংহ, বানর, উট, ময়ুর ও জিরাফসহ প্রতিটা খাঁচার সামনেই দর্শনার্থীদের কমবেশি ভিড় দেখা যায়। ভিড় ছিলো ইমু পাখি, উট পাখি, কোকিল, বকদের খাঁচার সামনেও। সবচেয়ে ভিড় দেখা গেছে জিরাফ, জেব্রা, ঘোড়া, বুনো মহিষ, সাদা ঘোড়া, গন্ডারের খাঁচার সামনে। এছাড়া এবার চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের জন্য সম্প্রতি আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ড থেকে পাঁচ প্রজাতির ১৬টি প্রাণি আনা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ শেষে এরই মধ্যে প্রাণিগুলো দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দর্শনার্থীদের বেশি আকর্ষণ ছিলো সেখানে।
১৮৬ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় চিড়িয়াখানায় রয়েছে ১৩৭টি খাঁচা। এসব খাঁচা ঘুরে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অনেককেই গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছে চিড়িয়াখানার মাঠে। আবার কেউ মুখে পানি ছিটিয়ে ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছেন।
জাতীয় চিড়িয়াখানায় শিশুদের জন্য একটি ছোট পার্ক। সেখানে রয়েছে স্লিপার, নাগরদোলা, রেলগাড়ি। টিকিট কেটে বাচ্চাদের এসব রাইডে তুলে দেওয়ার ভিড় লেগেছিলো প্রায় সারাদিন। এ সময় জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া না গেলেও পরিবেশ ছিলো সন্তোষ জনক।জাতীয় চিড়িয়াখানায় নিজস্ব সিকিউরিটির পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ টহল বাড়ানো হয়েছে এবার।
চিড়িয়াখানার একাধিক সুত্রে জানা যায়, সার্বক্ষনিক চিড়িয়াখানার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কয়েকটি টিম কাজ করছে। লোকবল কম থাকায় কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করে দিয়েছি। দর্শনার্থীরা যাতে স্বাচ্ছন্দে ঘুরে দেখতে পারে সেজন্য বিভিন্নস্থানে পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সম্পাদনা : মাজহারুল ইসলাম
আপনার মতামত লিখুন :