শিরোনাম
◈ রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি, চার মাসে এলো এক লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা ◈ প্রবাসী ভোটারদের সতর্কতা: ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না দিলে পোস্টাল ভোট বাতিল ◈ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের বিষয়ে যা জানালেন শিশির মনির ◈ বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অনুমোদন ◈ ১৯ দিনে প্রবাসী আয় ২ বিলিয়ন ডলার ◈ ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ, আগুন ◈ জার্মা‌নি‌কে হা‌রি‌য়ে নারী কাবা‌ডি বিশ্বকা‌পের সেমিফাইনালের পথে ভারত ◈ ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবকে কেবল দুধেল গাভী হিসেবে দেখেন ◈ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা ◈ নারী বিশ্বকাপ কাবা‌ডি‌তে চাই‌নিজ তাই‌পের কা‌ছে হে‌রে গে‌লো ইরান

প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারী, ২০২২, ০৩:৫৪ রাত
আপডেট : ২২ জানুয়ারী, ২০২২, ০৩:৫৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাহা মির্জা: দমবন্ধ সময়ের বড় প্রয়োজনীয় আন্দোলন

মাহা মির্জা: বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পিএইচডি করা শিক্ষক কেমন করে বলতে পারলেন ‘আমরা কি চাষাভুষা... আমরা তো বুদ্ধিজীবী শ্রেণিতে বিলং করি’। আসলেও তো, কী ভীষণ ঔদ্ধত্যপূর্ণ শোনালো কথাটা। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কি এভাবে বলতে পারেন? কিন্তু এটাও তো ঠিক যে এই অহঙ্কার বা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে হিউমিলিয়েট করার এই অধিকারবোধ, এদেশের একটা বড় অংশের শিক্ষকের মধ্যেই প্রবলভাবে বিদ্যমান। শিক্ষক সম্মান দাবি করতেই পারেন, কিন্তু সেটা যে মিউচুয়াল হতে হবে, সেটা যে তার কাজ ও ব্যবহারের মাধ্যমেই অর্জিত হতে হবে, সেই বোধটা থাকতেও তো একটা চিন্তাশীল ও দায়িত্বশীল মনের চর্চা দরকার। উচ্চশিক্ষা মাত্রই কি সেই শর্ত তৈরি করে? পিএইচডি একটা ট্রেনিং, একটা কঠোর মেথডিকাল জার্নি, কিন্তু এর মধ্যে পাবলিক ইন্টারেস্টের পক্ষে থাকার মতো আলাদা কোনো নৈতিক এলিমেন্ট নেই। বরং একাধিক ডিগ্রি এবং বহু পাবলিকেশনওয়ালা শিক্ষকও মনুষ্য সমাজের জন্য ভবাবহ ওঠে উঠতে পারেন। সুবিধাভোগ, ক্ষমতার চর্চা, দলীয় আনুগত্য, পদ পদবি এসব তো আছেই। তার উপর আবার শিক্ষা ব্যবস্থার কলোনিয়াল কাঠামো এবং সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে কমপ্লেক্স কিন্তু সমৃদ্ধ বিতর্কগুলোকে খারিজ করে শুধু মেথডিকাল বা টেকনিক্যাল দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়ার যে একাডেমিক চল, সেই কারণেও একজন পিএচডি করে ফেললেন তো এনলাইটেন্ড হয়ে গেলেন, দেশ ও সমাজের জন্যে উপকারী হয়ে গেলেন বা মানুষের পক্ষে, সাধারণের পক্ষে তার অবস্থান পাকাপোক্ত হয়ে গেলো, এমনটা ভাবার মতো বাস্তবতা অন্তত আজকের বাংলাদেশে নেই।

এ কারণেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডিধারী শিক্ষক, কৃষকের পক্ষে নয়, বরং কর্পোরেট বীজ কোম্পানির পক্ষে ওকালতি করতে পারেন। এ কারণেই পিএইচডিধারী বহু অর্থনীতিবিদ জিডিপি দেখে বা গার্মেন্টসের অর্ডার বৃদ্ধি দেখে অর্থনীতিকে হাই রেটিং দেন, অথচ গার্মেন্টস খাতের অব্যাহত শ্রমিক ছাঁটাই, কৃষকের উপর্যুপরি খরচ বেড়ে যাওয়া বা গরিবের বহুমুখী দুর্দশা দেখার দৃষ্টিভঙ্গি তার তৈরি হয় না। এ কারণেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের গণিতে পাকা প্রকৌশলী বিনা দ্বিধায় ভূমিহীন কৃষকের ১০ হাজার তরমুজ গাছ উপড়ে ফেলতে পারেন। হেলসিংকি থেকে পিএইচডি করে ফেলা অধ্যাপকটি তাই চাষাভুষাকে আলাদা অচ্ছুৎ জাত মনে করছেন, এতে অবাক হচ্ছি না। এমন সামন্তবাদী, নিপীড়ন সহায়ক, ক্ষমতাপূজার পরিবেশে, সাস্টের ‘বুদ্ধিজীবী’ শ্রেণিতে ‘বিলং’ করা মহোদয়রা তাদের ‘সন্তান’দের আবাসন সংকটের ব্যাপারটা বুঝতেই পারছেন না, সন্তানদের পিঠে ডাণ্ডার দাগ দেখতেই পাচ্ছেন না, পুলিশের নির্মম আক্রমণেও কোনো নিপীড়ন দেখতে পাচ্ছেন না এতেও আর অবাক হচ্ছি না।

বরং বাস্তবতা এটাই যে এদেশের প্রায় একডজন ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। যতোদূর জানি ইউজিসির পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন জমাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কী। দুর্নীতি কি এই দেশে খারাপ কিছু? তার উপর হীরক রাজ্যের আশীর্বাদপুষ্ট ভিসিরা তো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদার। ব্যাপারটা এমন যে ভিসি দুর্নীতি করেছে তো বেশ করেছে, উপরের আশীর্বাদ নিয়েই তো করেছে। এতো টাইটলি মনিটরড এবং হাইলি সার্ভেইলেন্সড একটা সিস্টেমের মধ্যে বসে ‘উপরওয়ালা’র সায় না থাকলে কী আর এসব করতে পারতো? তাহলে তাকে সরতে হবে কেন? কী আশ্চর্য। তার মানে সাস্টের ছেলেমেয়েদের সামনে শত্রু ভয়ঙ্কর। আপাতদৃষ্টিতে ভিসি, কিন্তু এটা আসলে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা একটা সংঘবদ্ধ এলিট চক্র। এটা পদ, পদবি, প্রজেক্ট, কনস্ট্রাকশন, নিয়োগ বাণিজ্য, পুলিশ, গ্রেনেড, জলকামান এবং এমন বহু ধরনের বেনিফিশিয়ারির সমন্বয়ে দিনে দিনে তৈরি হয় একটা লাভের গুড়ের নেটওয়ার্ক। এই জাল ক্ষমতার নেশায় উন্মত্ত, ন্যায়-অন্যায় বিষয় নয়। কিন্তু সাস্টের ছেলেমেয়েদের যথাসময়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত, মার খেয়ে পাল্টা মার দেওয়ার সক্ষমতা এবং এই মুহূর্তের কঠিন, কিন্তু অটল অবস্থান মনে করিয়ে দেয়, সফল না বিফল তা তো সময় বলবে, কিন্তু এভাবেই ক্ষমতার টাওয়ারের ভিত কাঁপে, ভয়ের পরিবেশে ধাক্কা লাগে এবং সাহস সংক্রামক হয়। দমবন্ধ সময়ের বড় প্রয়োজনীয় আন্দোলন এগুলো। সাস্টের আন্দোলনে পূর্ণ সংহতি। ফেসবুক থেকে

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়