গৌতম রায়: হাসান স্যারের প্রয়াণের খবর শুনে কেমন যেন ঘোরলাগা অবস্থায় রওয়ানা দিই তাঁর বাসার উদ্দেশে। ইতোমধ্যে অনেকে এসেছেন, অনেকে আসছেন। আমি গিয়ে আস্তে করে উঁকি দিই ওই ঘরটিতে, যেখানে স্যার ঘুমোচ্ছেন। স্যারের সঙ্গে দেখা হওয়ার বা সরাসরি কথা বলার যে কয়টি স্মৃতি আছে, সেগুলো বাইরে গিয়ে আজকের এই মুখটি দেখার মতো সাহস কি আদৌ আমার আছে? না, একাধিকবার উঁকি দিয়েও সেই সাহসটুকু আর করতে পারিনি। বরং তাঁর কথা বলার জীবন্ত স্মৃতিটুকুই থাক আমার কাছে। তাহলে কেন গিয়েছিলাম? সেই উত্তরও আসলে জানা নেই। স্যারের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই- একজন লেখক ও গুণমুগ্ধ পাঠকের যেটুকু সম্পর্ক থাকে সেটি ছাড়া। বরং সম্পর্ক যেটুকু, সেটুকু রয়েছে স্যারের মেয়ে শুচিদির সঙ্গে। শুচিদি আমার আর বিজয়ের বেশ কিছু দারুণ ছবি তুলে দিয়েছিলেন। ফোনে হুট করেই একটু কথা হতো। আজ শুচিদির সঙ্গে চোখাচোখি হলো কয়েকবার। আমি কিছু বলতে পারিনি, কাছে ঘেঁষতে পারিনি শুচিদির। একবার মনে হয়েছিলো গিয়ে হাতটুকু ধরি, কিন্তু এখানেও সাহস অর্জন করতে পারিনি। বাইরে বেরিয়ে দেখি ‘উজান’-এর গাছগুলো থমকে আছে। থমকে আছে প্রতিটা পাতা। হলুদাভ আলোর চাঁদও ম্রিয়মাণ। শক্তিশালী মানুষকে ধারণ করার যে প্রস্তুতি, প্রকৃতি সম্ভবত সম্মিলিতভাবে সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছে।
আর আমার বুকে বাজছে শুধু ‘যদি আমি ঝরে যাই একদিন’: ‘যদি আমি ঝরে যাই একদিন কার্তিকের নীল কুয়াশায়/যখন ঝরিছে ধান বাংলার ক্ষেতে-ক্ষেতে ম্লান চোখ বুজে/যখন চড়াই পাখি কাঁঠালীচাঁপার নীড়ে ঠোঁট আছে গুজে,/যখন হলুদ পাতা মিশিতেছে খয়েরি পাতায়/যখন পুকুরে হাঁস সোঁদা জলে শিশিরের গন্ধ শুধু পায়/শামুক গুগলিগুলো পড়ে আছে শ্যাওলার মলিন সবুজে/তখন আমারে যদি পাও নাকো লালশাক-ছাওয়া মাঠে খুঁজে/ঠেস্ দিয়ে বসে আর থাকি নাকো যদি বুনো চালতার গায়ে/তাহলে জানিও তুমি আসিয়াছে অন্ধকার মৃত্যুর আহ্বান’।
আপনার মতামত লিখুন :