শফিকুর রহমান
বর্তমানকে বুঝতে হলে অতীত ইতিহাস-তথা প্রাচীনত্বকে জানা অত্যাবশ্যকীয়। এই প্রাচীনত্বের গর্ভ হতেই ক্রমবিকাশের ধারাকে অবলম্বন করে আমরা বর্তমান পর্যায়ে এসেছি। বর্তমানে যা নতুন তাও একসময় প্রচীনত্বের সম্ভ্রম লাভ করবে। ভবিষ্যৎ যেখানে বর্তমানের ক্রমাভিব্যক্তি সেখানে প্রাচীনত্বকে বা অতীতকে মূল্যায়ন না করে কোনো উপায় নেই। যা প্রাচীন তা শ্রেষ্ঠ হতেও পারে, নাও পারে, কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের কষ্টিপাথরে যাচাই করে যদি দেখা যায় যে, তার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রয়েছে, তবে তা আমাদের প্রাণে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে-সমষ্টিগতভাবে আলোড়িত করে। আমাদের অতীত কি সমৃদ্ধ ছিলো? ইতিহাসের পাতা উল্টালে আমরা যে বীর ছিলাম এবং শত্রæর আক্রমণ হতে আত্মরক্ষা করতে পারতাম তার অসংখ্য প্রমাণ মিলবে। তার অর্থ কী এই নয় যে, আমরা তখন জ্ঞান-বিজ্ঞানেও উন্নত ছিলাম।
অধ্যাপক ম্যাক্স মুলার এ ‚খকে প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ মর্ত্যকে অমরাপুরি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, এই ভ‚ জ্ঞানের খরপ্লাবনে প্লাবিত হয়েছিলো এবং জীবনসংগ্রামের বাস্তব সমস্যা সমাধানে সমর্থ হয়েছিলো যার কাছে প্লেটো, ক্যান্ট প্রভৃতি দার্শনিকও ন ছিলেন। কর্নেল টড (Colonel Tod)-এর মতে গ্রিক দার্শনিকগণ যাদের গরিমায় মুগ্ধ হয়েছিলেন, প্লেটো, থ্যালিস, পাইথাগোরাস যাদের শীর্ষস্থানীয় ছিলেন, সেই আদর্শ মনীষীগণের আদিস্থান এই ভ‚। তাদের জ্যোতির্বিদ্যায় ইউরোপ আজও বিমুগ্ধ। শুধু জ্যোতির্বিদ্যাই নয়, স্থাপত্য-কারুকাজ ও সংগীতসহ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ছিলেন শ্রেষ্ঠতম। এ ভ‚ যখন খনার মতো বিদুষীর জন্ম হয় তখন পাশ্চাত্য হয়তো নারী জাগরণের কথা চিন্তাও করেনি।
বাঙালির স্বাস্থ্য ছিলো ঈর্ষণীয় যা এ অঞ্চলের উন্নততম চিকিৎসা পদ্ধতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিচায়ক। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতের বড় লাট লর্ড মিন্টো বলেছিলেন, ‘ভারতের বাঙালিরা দীর্ঘাকায়, বলিষ্ঠ, পালোয়ানের ন্যায় তাদের শরীরের গঠন। আমি এরূপ জাতি আর দেখিনি।’ আমাদের একটি সমৃদ্ধ অতীত ছিলো, কিন্তু আমরা নিজেদের অতীত জানি না। তাই আমাদের অবস্থা আজ ঘুমন্ত সিংহের মতো। সিংহ যখন জাগে তখন শুধু তার নিদ্রা ও তন্দ্রাই দূর হয় না, বিপুল বিক্রমে তার সিংহত্বও জাগে। তাই প্রয়োজন পৃথিবী ও মানুষের কল্যাণে শুধু নিজেকে জাগিয়ে তোলা। Shafiqur Rahman-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।