শিরোনাম
◈ আবারও বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১১৮৪৬০ টাকা ◈ ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে: এডিটরস গিল্ড ◈ দেশের উন্নয়ন দেখে বিএনপি’র মাথা খারাপ হয়ে গেছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ যুক্তরাষ্ট্র স্মার্ট প্রাণিসম্পদ প্রকল্পে ৩৪ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিবে ◈ সিটি টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে কাঁচাবাজারে দাম কমবে: সাঈদ খোকন ◈ নরসিংদীতে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় মা-ছেলেসহ চারজন নিহত ◈ রোববার থেকে আবার গাউন পরতে হবে আইনজীবীদের ◈ সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশে বাধা নেই: ডেপুটি গভর্নর ◈ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হন: রাষ্ট্রপতি ◈ দেশের জিডিপির পূর্বাভাস কমালো জাতিসংঘ, চিন্তা মূল্যস্ফীতি নিয়ে

প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৩৮ দুপুর
আপডেট : ৩০ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৩৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন: বাংলাদেশ এগিয়েছে, তবে মানুষ এগোতে পারেনি!

সম্পাদক-সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খানের স্বপক্ষে একটি কথা হচ্ছে- তিনি নিজেই সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করেছেন। তিনি জানেন পত্রিকা কেমন হওয়া উচিত। পাঠক রুচি কেমন। তা ভেবেই পত্রিকার অবয়ব তৈরি করা হয়েছে। আমাদের অর্থনীতি পড়লে অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। অন্য কোনো অর্থনৈতিক দৈনিক পত্রিকা না পড়লেও চলে। উন্নয়ন-অগ্রগতির খবরের বিশ^স্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে আমাদের অর্থনীতি পত্রিকা। ফলে আমাদের অর্থনীতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার শুভেচ্ছা।

দেশের ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য গৌরব ও গর্বের ব্যাপার। জন্মলগ্নে বাংলাদেশ কতোদিন টিকে থাকবে তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় ছিলো। যদিও বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশে এসেছে, বাংলাদেশ টিকে থাকবে। সেই বাংলাদেশ ৫০ বছরপূর্তি পালন করার সময় আর্থসামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া ভারত-পাকিস্তানকে অনেক ক্ষেত্রেই ছাড়িয়ে গেছে, তখন আমরা গর্বিত বোধ করি বাংলাদেশকে নিয়ে। কিন্তু কথা হচ্ছে চকচক করলেই তো সোনা হয় না, সোনার ভেতরে খাদ আছে কিনা তা দেখতে হয়। তেমনি বাংলাদেশ অনেক চকচক করছে এখন। দৃশ্যমান ঔজ্জ্বল্য আমাদের বিমোহিত করছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ এগিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ এগোতে পারেনি। মানুষের অবনতি হয়েছে প্রচÐভাবে। বাংলাদেশ কোনো ক্ষেত্রেই সন্তোষজনক উন্নয়ন অর্জন করতে পারেনি।

ধরুন শিক্ষা ব্যবস্থার কথা। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলো বিগত ৫০ বছরে, এ সময়ে যতো সরকারই এসেছে, প্রত্যেকেই শখের বশে একটি শিক্ষা কমিশন করেছে এবং ফলাফল শূন্য! কারণ শিক্ষা কমিশনভিত্তিক আইন প্রণয়ন নীতিনির্ধারণ করা হয়নি। বাংলাদেশে একটি শিক্ষা কমিশন হয়েছিলো, সেটা কুদরত-ই খোদা শিক্ষা কমিশন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ওই কমিশনের পরামর্শ বাস্তবায়ন করতেন। কিন্তু তিনি মারা গেলে তারপর আর কেউ তা আজও পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি। কুদরত-ই খোদা শিক্ষা কমিশনে যে নির্দেশনা আছে, তা যদি বাস্তবায়ন হতো, তাহলে বাংলাদেশ শিক্ষায় সন্তোষজনক উন্নয়ন করতে পারতো। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন হ য ব র ল। যদিও সাম্প্রতিককালে পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়ার একটি সন্তোষজনক সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষা শিক্ষার অঙ্গ বটে, তবে সম্পূর্ণ অঙ্গ নয়। অন্যান্য অঙ্গকে বঞ্চিত রেখে শুধু একটি অঙ্গের পরিচর্যা করলে শরীর যেমন ঠিক থাকে না, তেমনি শিক্ষার অঙ্গও ঠিক থাকে না। দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব আছে। যে কারণে মানসম্পন্ন শিক্ষার্থীও তৈরি হচ্ছে না। বড় সঙ্কটের মধ্যে আছে শিক্ষা ব্যবস্থা।

অর্থনীতিতে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে, প্রবৃদ্ধি অর্জন করছি, কিন্তু উন্নয়ন এখনো হয়নি। যদিও বাংলাদেশ উন্নয়নের তকমা পেয়েছে! কিন্তু আমি দুর্মুখের মতো বলি যে, চলমান ও ক্রমবর্তমান বৈষম্য বজায় রেখে একটি দেশকে উন্নত দেশ বলা কাঁঠালের আমসত্তে¡র মতো অবস্থা। অর্থনীতির অগ্রগতির সূচক আমাকে আনন্দিত করে ঠিকই, কারণ প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের পূর্বশর্ত। অন্তত উন্নয়নের পথে আছি আমরা। কিন্তু দেশের রাজনীতি ধসে গেছে। বিগত ৫০ বছরে রাজনীতি ধসে যেতে যেতে এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, দেশে কোনো রাজনীতি আছে বলে বিশ্বাস করতে মন চায় না। রাজনীতি আর অর্থনীতির মধ্যে এই যে বৈপরীত্য তা ভয়ঙ্কর ফলাফল তৈরি করবে। আমাদের বিপদসংকেত আমরা শুনতে পাচ্ছি। রাজনীতিবিদরা শুনতে পাচ্ছেন কিনা জানি না। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও নানা রকম হুমকির মধ্যে পড়বে, যদি না রাজনীতি আর অর্থনীতি সমান্তরালে চলে।
কৃষির বড় দুর্দশা চলছে। কবি শামসুর রাহমান একসময় বলেছিলেন তাঁর স্বাধীনতা তুমি কবিতায়Ñ স্বাধীনতা মানে ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি। আমাদের কৃষক এখন ফসলের মাঠে হাসেন না। তাঁরা ধানের দাম পান না, পাটের দাম পান না। বলতে গেলে কিছুই পান না তাঁরা। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছিলেন, কৃষকেরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত বাংলাদেশে। এই নির্যাতনের শেষ আজও হলো না। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা কৃষি ও কৃষকবান্ধব। ঠিকই আছে, আমি মানতে চাইÑকিন্তু আমি কৃষকের মুখে হাসি দেখছি না।

বাংলাদেশে সংস্কৃতি আছে বলে মনে হয় না। অথচ ৬০-এর দশকে রাজনীতি আর সংস্কৃতি হাত ধরাধরি করে চলেছিলো। যে কারণে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ অনিবার্য হয়ে উঠেছিলো। এখন বাংলাদেশে সর্বসাম্প্রতিক সঙ্কট হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। এই সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণ তৈরি করেছে আমাদের শাসকগোষ্ঠী। সংবিধানে যদি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকে আর হেফাজতের মতো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, নারী বিদ্বেষীদের সঙ্গে সরকারের সখ্যতা থাকে, তখন সেদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ অনিবার্য হয়।

বড় বড় অনেক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনো ঘটনারই সঠিক তদন্ত ও বিচার হয়নি। তবে এবার সরকার বেশ উদ্যোগী। কারণ সারাবিশ^ বাংলাদেশের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খিস্ট্রান ঐক্য পরিষদ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি চেয়েছে। সরকার আজও তা করেনি। বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, ঘটনার তদন্ত প্রায় শতভাগ শেষ হয়ে এসেছে। সরকারের তদন্তে মানুষের আস্থা খুবই কম। পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে পড়লামÑ দেশের কার ওপর কতোটুকু আস্থা আছে মানুষের। চিকিৎসকদের ওপর মানুষের আস্থা ৫৪ শতাংশ, সেনাবাহিনীর ওপর ২২ শতাংশ। আর রাজনীতিবিদদের ওপরে কোনো আস্থা নেই। বাংলাদেশ এখন একটি ক্রান্তিকালে অবস্থান করছে। এই ক্রান্তিকালে অবস্থানে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার মতো সঠিক নেতৃত্ব ও কর্মকাÐ প্রয়োজন। তার অভাব লক্ষ্য করছি। তবে বাংলাদেশ নিয়ে আমি হতাশ নই। আমি আশা ধরে রাখতে চাই দেশের মানুষের দিকে তাকিয়ে। এই মানুষ, এই আমজনতা সবসময় ইতিহাসে খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ গড়বে সাধারণ মানুষ।
পরিচিতি : ইতিহাসবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়