জাহিদ হোসেন: শক্তি সবাই চায় কিন্তু সবাই জানে না শক্তির মূল উৎস হলো নারী বা জননী বা সাধনসঙ্গিনী। জীবনের প্রতিটি ধাপে কোনো না কোনোভাবে মাতৃশক্তির ওপরেই পুরুষকে নির্ভর করতে হয়। লালন তার ‘ভজ রে জেনেশুনে’ গানে বলেছেন, ‘নিলে ফাতেমার স্মরণ ফতে হয় করণ’। অর্থাৎ নিবিষ্টচিত্তে বিবি ফাতেমাকে স্মরণ করলে সাধন-সিদ্ধি হবে। তিনি বলেছেন, নারীর এই ‘শক্তি’র মাধ্যমেই পরম করুণাময় সাঁইয়ের দরবারে হাজির হওয়া সম্ভব। এক গানে লালনের শিষ্য দুদ্দু নারীর চরণ ধরেই সাধনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সাধন করো রে মন ধরে নারীর চরণ।’ ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছেন ‘মাতৃভাব সর্বাধিক শুদ্ধভাব’।
বৈষ্ণব সহজিয়া সাধকরাও শক্তি সাধনার উদ্দেশ্যে যুগল সাধনা করে থাকেন। তাদের মতে, নারীর মধ্যে শৃঙ্গার-ভাবোদ্দীপক অগ্নিকু আছে। দেহ-মিলনের মধ্য দিয়ে পরমার্থ লাভ করা যায়। ব্রহ্মার সকল তত্ত¡ নিহিত আছে দেহভার মধ্যে; স্থ‚ল অর্থে তা কাম তবে সূ অর্থে তা প্রেম।
সেই তো উজ্জ্বল রহে রসে ঢাকা অঙ্গ /কাম হৈতে জর্ম প্রেম নহে কাম সঙ্গ/লৌহকে করয়ে সোনা লৌহ পরসিয়া/ তৈছে কাম হৈতে প্রেম দেখ বিচারিয়া
কবিদের অভিজ্ঞতা বিভিন্ন স্বাদের এবং সর্বস্ব নিবেদনের। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়, বলেছেন, যে পংকে ঐ চরণ পড়ে তাহারই দাগ বক্ষে মাগি...। কবির আত্মআবিষ্কার আর উপলব্ধিতে নারীর জন্যই যেন প্রতিটি প্রত্যুষের জন্ম হয়। নারীর মায়ার বাঁধনেই সময় বয়ে যায়, পৃথিবী টিকে থাকে, আল মাহমুদ তাই দৈববাণীর মতো উচ্চারণ করেন
‘তোমার ঠোঁটের কাছে ঠোঁট ঘষে মনে হলো কাল/নারীর নুনের মধ্যে আছে এক মায়াবী আগুন/যার লোভে মহাকাল জন্ম দেয় প্রতিটি সকাল’
আর আমি, এই অকৃতি অধম, রবীন্দ্রনাথের ‘চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে’ গানটি যখন গাই, তখন ঈশ্বর নয় বরং প্রেয়সীর চরণ দুটিই মনে মনে আঁকড়ে ধরি। আমার পুরুষজন্ম সার্থক হয়। Zahid Hossain-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ন।