স্নেহাশীষ রায়: কলাবাগানে এবার পূজা করার অনুমতি দেয়নি সিটি করপোরেশান। প্রতিবাদী পোস্ট দেখলাম ফেসবুকে। একজন কমেন্টে লিখেছেন, প্রতি বছর পুজোতে খরচ হয় কোটি টাকা। সে টাকার অর্ধেক জমিয়ে তো স্থায়ী স্থাপনাই করা যায় ধানমন্ডিতে। তিনি বড়াই করে বলেছেন, স্বামীবাগে ইসকন মন্দির তৈরি করা সম্ভব হয়েছে শতকোটি টাকায়। হিন্দুদের দুর্গা পূজায় এতো খরচ। কিন্তু মা দুর্গা প্রতি বছর কখনো ঘোটকে, কখনো নৌকায় কৈলাস থেকে কষ্ট করে, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে আসেন। পুজোর কিছু খরচ বাঁচিয়ে, মায়ের জন্য একটা রোলস রয়েসই তো কিনে দিতে পারেন, সার্বজনীন পূজা কমিটি। কিছু সময়ের জন্য কৌতুক সরিয়ে রাখি। আমরা জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা করতাম। বাজেট ছিলো হাজার ত্রিশেক। কোটি টাকার কড়চা শুনে ঘাবড়ে গেছি। এতো টাকা চাঁদা ওঠে কীভাবে? আর এতো টাকা, মাত্র চারদিনে ফুরিয়েই বা যায় কীভাবে? ধর্মের এই জিনিসটি আমাকে খুব বিস্মিত করে।
উপাসনা করার জন্য, ধর্মভীরু মানুষ মুক্তহস্তে দান করেন। কিন্তু রাস্তায় পীড়িত মানুষ পড়ে থাকলেও কেউ ফিরেও তাকায় না। ধর্মগুলোর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো এগুলো একটা কাঠামোগত শিক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু কাঠামোর ভেতর যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি ছিলো, কিছু স্পোরাডিক উদাহরণ ছাড়া সেই প্রাণ প্রায় অনুপস্থিত। আমি এক ইহুদি রেবাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা তো মুসলিমদের মতোই এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বরের উপাসনা করো। তাহলে প্রার্থনার আলাদা উপাসনালয় কেন? তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, কীভাবে প্রার্থনা করতে হবে, কীভাবে জীবন চালাতে হবে, কী খেতে হবে, সবকিছুই পবিত্র গ্রন্থে পরিষ্কার লেখা আছে। এর বাইরে যা ঘটে তাই বিচ্যুতি। যেন কাঠামোর বাইরে গিয়ে, স্বাধীনভাবে ভাবার কোনো সুযোগ নেই। ঠিক একারণেই ধর্মে অজস্র নীতিকথা লেখা থাকলেও তা প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ভÐামিতে পর্যবসিত হয়েছে এবং কাঠামোগত ধর্ম এমন এক নাজুক কল্পিত বাস্তবতার পৃথিবী তৈরি করেছে যে, এর বিচ্যুতি ঘটতে দেখলে কেউ কেউ শরীরে বোমা বেঁধে আত্মঘাতী হতেও কুণ্ঠিত হন না। ফেসবুক থেকে