আশীফ এন্তাজ রবি: আমাদের অনেকেই ভারতকে পছন্দ করেন না। কিন্তু ভারতীয় সিনেমা, টিভি শো দেখেন। ভারতীয় সাহিত্য পড়েন। ভারতীয় গান শোনেন। আবার অনেকেই আছেন চরমভাবে পাকিস্তানবিরোধী। কিন্তু পাকিস্তানি কাবাব দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। গায়ক আলমগীরের গান বুঁদ হয়ে শোনেন এবং গলা মেলানআমারে ভাসাইলিরে, আমারে ডুবাইলিরে। নুসরাত ফতেহ আলী খানের সুরে ভেসে যান। এর কারণ কী? আপনারা কখনো ভেবে দেখেছেন? এর কারণ হচ্ছে কনটেন্ট বা প্রোডাক্ট। কনটেন্ট যদি ভালো হয়, তাহলে মানুষ যে করেই হোক, সে কনটেন্টের কাছে যাবে। যাবেই। এক্ষেত্রে দেশপ্রেম বা চেতনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠবে না। যেখানে কনটেন্ট ভালো, সেখানেই মানুষের ভিড়। যেখানেই মানুষের ভিড়, সেখানেই বিজ্ঞাপন। কারণ বিজ্ঞাপনওয়ালাদের তার জিনিস বেচতে হবে। বিজ্ঞাপনের মূল লক্ষ্যই মানুষের কাছে পৌঁছানো।
আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলওয়ালারা খুব বিপদে আছেন। আগে তাদের যারা বিজ্ঞাপন দিতো, তারা এখন ভারতীয় চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেয়। কেননা তারা দেখেছেন, দেশটার নাম বাংলাদেশ বটে, কিন্তু সন্ধ্যার পর টেলিভিশনে মানুষ ভারতীয় চ্যানেল দেখে। দেশের বাতাবি লেবু চ্যানেলে মাছিও ওড়ে না। কাজেই তারা ভারতীয় চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেন। তাদের কোনো দোষ নেই। জি¦, আসলেই দোষ নেই। তাদের সাবান, শ্যাম্পু, জুস বিক্রি করতে হবে। বিজ্ঞাপন না চালালে সেগুলো বিক্রি হবে না। আবার দেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করা আর না করা সমান কথা। কাজেই মীরাক্কেলে বিজ্ঞাপন দাও। মানুষ মীরাক্কেল দেখুক, ফাঁকে ফাঁকে প্রাণে চুমুক দিক। আমরা যদি ভাবি, সব বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করলে বিজ্ঞাপনদাতারা হু হু করে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভাসিয়ে দেবে, সেটা ভুল ভাবনা। আমরা যদি ভাবি, সব বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করলে, মানুষ হুমড়ি খেয়ে দেশি চ্যানেল দেখবে, এটা শুধু ভুল নয়, আহাম্মকি ভাবনা।
টিভি বন্ধ হলে মানুষ ইউটিউবে যাবে। ইউটিউব বন্ধ হলে সে ওটিটিতে যাবে। আর যদি ওটিটি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেন, তাহলে মানুষ পেনড্রাইভে বিদেশি কনটেন্ট দেখবে। এমনকি যদি পেনড্রাইভও নিষিদ্ধ করেন, তাহলে মানুষ টাকা জমিয়ে বছর শেষে কলকাতায় বেড়াতে যাবে, শুধু নাটক সিনেমা দেখার জন্য। এখন যেমন চিকিৎসা করাতে যায়। এভাবে হয় না, এভাবে কোনোদিন সমস্যার সমাধান হয় না। ভালো কনটেন্ট বানান। মানুষ দেখবে। মানুষ দেখলেই সেখানে বিজ্ঞাপন আসবে। তখন জোর করে স্টার টিভি, জিটিভি বন্ধ করতে হবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভালো কনটেন্ট কীভাবে বানাবো? ভালো কনটেন্ট, ভালো সিনেমা, ভালো নাটক বানাতে কী লাগে? এ প্রশ্নের উত্তরে শতকরা একশ শতাংশ মানুষ বলবে, ভালো সিনেমা বানাতে লাগে টাকা, বাজেট। আমার উত্তর হচ্ছে, না। যেকোনো জিনিস বানাতে অবশ্যই টাকা লাগে, কিন্তু তার আগে লাগে সততা। সততা। সততা। আপনি টিভি চ্যানেলের মালিক বলে, নিজেই সেই চ্যানেলে পিক আওয়ারে গান গাইবেন, এই করলে তো চ্যানেল চলবে না। আপনি টিভি চ্যানেলের মালিক বলে আপনার আপন বোন আজগুবী সব রেসিপি দিয়ে টিভি শো করবে, এটা তো চলে না। আপনি পত্রিকার বড় বিনোদন সাংবাদিক। আপনি নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখবেন, আর পরিচালক সেই অখাদ্য স্ক্রিপ্ট মোটা দামে কিনে নেবে। কেন কিনবে? কেননা তাহলে তার পত্রিকার আপনার ব্যাপক প্রচারণা হবে। এভাবে তো একটা প্রফেশনাল ইন্ড্রাস্টি চলে নারে ভাই।
বাংলাদেশের অধিকাংশ গীতিকার কোনো না কোনো পত্রিকার সাংবাদিক। কেমনে কী? গান কী কেবল সাংবাদিকরাই লিখতে পারেন, অন্য কেউ পারেন না? অন্য কাউকে এখানে ঢুকতে দেবেন না? এসব করেন দেখেই আমাদের কনটেন্টের আজ এই অবস্থা। সেদিন বাংলাদেশের এক টিভিতে নাটক দেখলাম। এই নাটকের ঘটনাটি লিখতে আমার গা গুলাচ্ছে, তবুও বলি। নায়ক বায়ুত্যাগ করেছে, নায়িকা এটা নিয়ে ঝগড়া করছে। তাকে বলছে, যাও বাথরুমে যাও, যাও পানি খাও। সিরিয়াসলি? এগুলো বানাবেন, এগুলো প্রচার করবেন, আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিছিল করবেন, বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করো...আপনাদের কী লজ্জাও করে না? এর আগে বিদেশি চ্যানেল নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। সেখানে একজন লিখেছে, আমি দেশ ও চেতনাবিরোধী বিদেশি এজেন্ট। যে লিখেছে তার বয়স ২০/২১। আর আমি আশীফ এন্তাজ রবি মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত গত ২৫ বছর ধরে। আমার মিডিয়া অভিজ্ঞতার বয়স, তার অরিজিনাল বয়সের চেয়ে বেশি। কাজেই তাকে স্নেহ করেই বলি, আমি বিদেশি এজেন্ট বটে, কিন্তু তুমি ভাই পিওর দেশি বলদ। তোমার মতো লাখে লাখে বলদ দেশে আছে বলেই সমস্ত পৃথিবীর জানালা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইনশাআল্লাহ তোমার মতো বলদেরা দেশকে একটি জানালাবিহীন গোয়ালঘরে পরিণত করবে। তোমার জন্য ভালোবাসা। ফেসবুক থেকে